নিজস্ব প্রতিনিধি,
গত ১০ নভেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ মোতাবেক বোলপুর মহকুমা আদালতে আত্মসমর্পণ করতে গিয়ে জেল হেফাজত হয়েছে প্রাক্তন বোলপুর আইসি প্রবীর দত্তের।অভিযোগ, বোলপুরের দর্জিপাড়ায় রাজু থান্ডার নামে এক রিক্সা চালক কে স্থানীয় থানার পুলিশ থানার লকআপে পিটিয়ে মেরে ফেলে। এই মামলায় আরেক অভিযুক্ত পুলিশের গাড়ির ড্রাইভার বেশ কয়েকমাস জেলবন্দি রয়েছে। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে বোলপুরের পাশাপাশি মঙ্গলকোটের থানার লকআপে এক ব্যক্তির মৃত্যুর ঘটনা মনে করাচ্ছে এলাকাবাসী দের কে। সেই ঘটনার সংবাদ করতে গিয়ে এক পাক্ষিক পত্রিকার দুই সাংবাদিক কে ম্যাসলম্যানদের দিয়ে প্রকাশ্যে মারধর করানো এমনকি মিথ্যা পুলিশ কেস দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল সেসময়কার পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রীর দারস্থ হয়েছিলেন ওই দুই সাংবাদিক। এসডিপিও এর নেতৃত্বে বিভাগীয় তদন্ত ঘটেছিল। এমনকি পুলিশ লকআপে রহস্যমৃত্যুতে দায়ী পুলিশ অফিসার সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে মামলায় সাক্ষীও হয়েছিলেন গ্রেপ্তারের সুবিধা করাতে । কি ছিল না সেই মামলায় ধারা। ৩০৭, ৩২৪,৩৭৯ এর মত ৭ টি জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল ওই দুই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। সময়ের ব্যবধানে সেই মামলা আদালতে স্থায়িত্ব পাইনি বেশিদিন। ঘটনাটি কি ঘটেছিল? যার জন্য সেসময়কার দাপুটে নেতার দলবল নিয়ে হামলা করতে হয়েছিল ওই দুই সাংবাদিকের উপর! ২০০৭ সালে ২ জুলাই হঠাৎই খবর এলো মঙ্গলকোট হাসপাতালের সামনে এক রক্তাক্ত লাশ পড়ে রয়েছে। মঙ্গলকোট থানা এবং হাসপাতাল একই বাউন্ডারিতে। পাশাপাশি অবস্থানে থাকা মঙ্গলকোটের ভাল্যগ্রাম অঞ্চলে লক্ষীপুর – পিড়িলির সেখ আম্বিয়া নামে এক কং সমর্থককে ২০০৭ সালে ১ লা জুলাই সন্ধেবেলায় তুলে আনে বলে অভিযোগ। যদিও পুলিশ ওই কং সমর্থককে বিদ্যুতের তার চুরি করা চোর হিসাবে তুলে আনে বলে দাবি। ঘটনার পরের দিন মঙ্গলকোট হাসপাতালের সামনে রক্তাক্ত লাশ দেখে এলাকাবাসীদের ভীড় জমে।সেসময়কার ভাল্যগ্রামের বর্ষীয়ান কং নেতা বর্শেদ আলির নেতৃত্বে থানার সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে থাকে। পুলিশ কখনো সেখ আম্বিয়ার রহস্যমৃত্যুতে হার্ট অ্যাটাক বলে দাবি করে। আবার কখনো বলে টিবি – যক্ষা রোগ ছিল নাকি তার। ২০০৭ সালে ১৫ জুলাই স্থানীয় ওই পাক্ষিক কাগজে প্রকাশিত খবরে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল – ‘যদি পুরাতন রোগের রোগী হয়, তাহলে মৃত ব্যক্তির ধারাবাহিক প্রেসক্রিপশন থাকবে, তা কই? সর্বপরি হাসপাতালের সামনে রক্তাক্ত হবে কেন মৃতদেহ টি? প্রত্যক্ষদর্শীরা মৃতব্যক্তির সারা শরীর জুড়ে বিভিন্ন আঘাত দেখেছিলেন বলে দাবি ‘। ওই সংবাদপত্র টি জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের নথিভুক্ত ছিল। তাই সেই সংবাদ আজও অটুট ওই তারিখের সংবাদপত্রে। তৎকালীন মঙ্গলকোট গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান পদে থাকা সিপিএম নেতা ডাবলু আনসারীর মধ্যস্ততায় মোটা অংকের অর্থে মৃতের পরিবারের সাথে বিষয়টি মিটিয়ে নিতে কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছিলেন ডাবলু আনসারী বলে বিভিন্ন সুত্র মারফত জানা যায়। ডাবলু আনসারী সিপিএমের আগে কংগ্রেস দল করতেন। তাই কং সমর্থকের রহস্যমৃত্যুতে ব্লক নেতৃত্বের সাথে বোঝাপড়াটা ঘটেছিল। এরপর থেকেই মঙ্গলকোট থানার একপ্রকার ডাকমাস্টার হিসাবে পুলিশের অন্দরমহলে চলে আসেন ম্যানেজ মাস্টার ডাবলু। রাজ্যে পালাবলের আগে পর্যন্ত পুলিশের মধ্যে নিরঙ্কুশ প্রভাব ছিল এই রাজনৈতিক নেতার। ‘পুলিশ লকআপে রহস্যমৃত্যু, সিবিআই তদন্তর দাবি’ প্রকাশিত সংবাদের এক সপ্তাহের মধ্যেই মঙ্গলকোটের নুতনহাট বাসস্ট্যান্ডে ডাবলু আনসারীর দলবলের হাতে প্রহৃত হয়েছিলেন ওই স্থানীয় কাগজের দুই সাংবাদিক। থানায় পুলিশ কেস রুজু করতে গেলে তৎকালীন ওসি সাদা কাগজে মিথ্যা খবর লেখার লিখিত মুচলেকা চান। বিষয়টি সেসময় জেলার পুলিশ সুপার কে জানানো হলে একপ্রকার বাধ্য হয়ে মামলা গ্রহণ করেন ওসি। তবে কাউন্টার মামলায় নিজেই সাক্ষী হয়েযান মামলার ওজনদার হতে”। বিষয়টি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, জেলাশাসক কে দফায় দফায় জানানোও হয়েছিল। তাতে এসডিপিওর নেতৃত্বে অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলে। তবে মূল ঘটনা সেই পুলিশ লকআপে রহস্য মৃত্যুর বিষয়টি চাপা পড়ে যায়। তবে ২০১৬ সালে বোলপুরে থানায় লকআপে রহস্যমৃত্যুতে তৎকালীন আইসি গত ১০ নভেম্বর বোলপুর আদালত আত্মসমর্পণ করতে গিয়ে জেল হেফাজতে গেছেন। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালে ২ জুলাই মঙ্গলকোট পুলিশ লকআপে সেখ আম্বিয়ার রহস্যমৃত্যুতে পুলিশের কারা দায়ী, তা জানবার ব্যাকুলতা বেড়েছে মঙ্গলকোটবাসীর…..