প্রয়াত আইসি রবিলোচন মিত্রের স্মৃতিতে দৌড় প্রতিযোগিতা সারেঙ্গায়
।শুভদীপ ঋজুমন্ডল বাঁকুড়া:–প্রতিবছরের ন্যায় এ বছরও-বাঁকুড়া জেলা পুলিশের ও উদ্যোগে সারেঙ্গা থানার পরিচালনায় বাঁকুড়ার সারেঙ্গায় অনুষ্ঠিত হলো স্বর্গীয় রবি লোচন মিত্র স্মৃতি দৌড় প্রতিযোগিতা ২০২৪। রবিবার সকাল আটটা নাগাদ এই দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু বড়গাড়রা হাইস্কুল থেকে, শেষ হয় সারেঙ্গা থানায়। পতাকা নেড়ে প্রতিযোগিতার শুভ সূচনা করেন বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার । প্রতিযোগিতায় পুরুষ এবং মহিলা বিভাগে প্রায় তিনশত জন অংশ গ্রহণ করে। ২০০৮ সাল থেকে জঙ্গলমহল জুড়ে মাওবাদীদের দাপট। ইতি মধ্যে মাওবাদীদের হাতে প্রাণ গেছে একাধিক বাম নেতা কর্মীর। তাদের ভয়ে অনেকে তখন বাড়ি ছাড়া। অন্যদিকে জঙ্গল মহল জুড়ে যৌথ বাহিনীর ভারী বুটের শব্দ, বাতাসে পোড়া বারুদের গন্ধ। ২০১০ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যায় তৎকালীন সারেঙ্গা থানার আই সি রবিলোচন মিত্রের কাছে খবর আসে সারেঙ্গার গোবিন্দপুর এলাকায় মাওবাদীদের আক্রমণ হয়েছে। হামলার শিকার কয়েকটি পরিবার, বিন্দুমাত্র দেরি না করে পুলিশবাহিনী নিয়েবেরিয়ে পড়েন নিজে। সামনে থেকে মাওবাদীদের সাথে লড়াই করেন। হাল্কা শীতের রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে এলাকাবাসীর কানে ভেসে আছে মুহুর মুহু র গুলির শব্দ।মূহুর্তে ভেঙে যায় রাতের নিস্তব্ধতা। ঘায়েল হন মাওবাদীদের কয়েকজন। এমন সময় মাওবাদীদের গুলি এসে লাগে তৎকালীন সারেঙ্গা থানার আই সি রবিলোচন মিত্রের শরীরে। তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয়স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্রে, সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। নিজের প্রাণের বিনিময়ে সেদিন রুখে দিয়েছিলেন সেই আক্রমণ। ইতিমধ্যেই ২০১১ সালে রাজ্যে ঘটে রাজনৈতিক পালা বদল, বাম জমানার পর রাজ্যে আসে মা মাটি মানুষের সরকারের প্রশাসন। জঙ্গল মহলে আর শোনা যায়না ভারী বুটের শব্দ, বাতাসে ভাসে না পোড়া বারুদের গন্ধ। জঙ্গল মহলে ফিরে আসে শান্তি। ২০১২ সালে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে সারেঙ্গা থানার প্রয়াত আই সি রবিলোচন মিত্রের স্মৃতিতে শুরু হয় রবিলোচন মিত্র স্মৃতি দৌড় প্রতিযোগিতা। তারপর থেকে প্রতি বছর ২৫ শে ফেব্রুয়ারী এই দৌড় প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে বাঁকুড়া জেলা পুলিশের উদ্যোগে এবং সারেঙ্গা থানার পরিচালনায়। সেই ভাবেই আজ অনুষ্ঠিত হল স্বর্গীয় রবিলোচন মিত্র স্মৃতি দৌড় প্রতিযোগিতা। এই প্রতিযোগিতায় এবারে বাঁকুড়া জেলা ছাড়িয়ে 24 পরগনা ,নদিয়া, পুরুলিয়া , মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম প্রভৃতি জেলার প্রতিযোগিরা অংশগ্রহণ করেছিল। পুরুষ বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার শালবনীর অনুপম মাহাত, এবং দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে পশ্চিম মেদিনীপুরের শালবনীর অমল মাহাত এবং তৃতীয় স্থান অধিকার করে অমিত মাহাত। অন্যদিকে মহিলা বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে দক্ষিণ ২৪ পরগণার ক্যানিংয়ের মুক্তি বায়েন দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে মগরাহাটের অতসী বায়েন ,তৃতীয় স্থান অধিকার করে রানাঘাটের মুক্তি রাজশ্রী দেবনাথ। এদিন সফল প্রতিযোগিদের হাতে সম্মানিক,ট্রফি ও শংসাপত্র তুলে দেন বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মকসুদ হাসান, সারেঙ্গা রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজ স্বামী তদ্বোধানন্দজী মহারাজ, রাইপুর বিধানসভার বিধায়ক মৃত্যুঞ্জয় মূর্ম্মূ, সারেঙ্গার বিডিও তমাল কান্তি সরকার, সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মৌসুমী সিংহ মহাপাত্র। শিক্ষারত্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত শিক্ষক সাধন মন্ডল।এছাড়াও এদিনের কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন সারেঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি অভিজিৎ বিশ্বাস, বাঁকুড়া জেলা পরিষদের সদস্য সুব্রত মিশ্র, সারেঙ্গা ব্লকের ৬ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান এবং এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী ধীরেন্দ্র নাথ ঘোষ, সুমন ব্যনার্জী, বিশিষ্ট শিক্ষক রনজিত দাশ চক্রবর্তী সহ অনান্যরা। এদিনের এই প্রতিযোগিতায় বেশ কয়েকজন শিশু অংশগ্রহণ করেছিল যা আগামী দিনে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে একটি ভালো দিক বলে মনে করেন উপস্থিত অতিথিবৃন্দ। এখানে উল্লেখ্য ২০১৭ সালের আজকের দিনে সারেঙ্গা থানা প্রাঙ্গনে প্রয়াত রবিলোচন মিত্রের একটি আবেক্ষমূর্তির আবরণ উন্মোচন করেছেন বাঁকুড়ার তৎকালীন পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা।