বন্যপ্রাণী রক্ষায় কড়া অবস্থান রেখে রিপোর্ট তলব হাইকোর্টের
মোল্লা জসিমউদ্দিন
‘বন্যেরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃক্রোড়ে’ প্রচলিত এই লাইনের বাস্তবতা হারিয়েছে মানবজাতির উন্নয়নে।গভীর জঙ্গল হারিয়েছে তার গভীরতা, বন্যপ্রাণীরা খাদ্যের সংকটে ক্রমশ হানা দিচ্ছে লোকালয়ে। হাতি কিংবা হনুমানের দল চাষের জমি পেরিয়ে আসছে গ্রামের দোরগোড়ায়। শুধুই পেটের খিদে মিটাতে। কোথাও গ্রামবাসীরা আবার কোথাও বা বন দপ্তরের তরফে দেওয়া হয়েছে বিদ্যুতের তারের বেড়া। আর তাতেই মরণফাঁদে পড়ে মরছে বন্যপ্রাণীরা। আবার উত্তরবঙ্গের জঙ্গলের ভেতরে রেললাইনে কাটা পড়ছে অবুঝ বন্যপ্রাণীরা। উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার – জলপাইগুড়ি জেলার পাশাপাশি ঝাড়গ্রাম – পশ্চিম মেদনিপুরে হাতির মৃত্যু ক্রমশ উদ্ধমুখি৷ কোথাও দাঁতাল হাতি মেরে হাতির দাঁত পাচারে এইরকম মরণফাঁদ গড়েছে আন্তর্জাতিক পাচারকারীরা। এই অভিযোগও শোনা যায়। ঘটনা যাই হোক চলতি বছরের একের পর এক বন্যপ্রাণী বিশেষত বাইসন – হাতির অমানবিক মৃত্যু কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির হৃদয়ে নাড়া ফেলে দিয়েছে। তাইতো গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি.বি রাধাকৃষ্ণন স্বতঃস্ফূর্তভাবে বন্যপ্রাণী রক্ষায় মামলা করলেন। সেইসাথে একগুচ্ছ নির্দেশিকা রেখে দু সপ্তাহের মধ্যেই রিপোর্ট তলব করলেন রাজ্যের মুখ্য বনপালের কাছে। পাশাপাশি এই মামলায় কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন দপ্তরের প্রধান সচিব, রাজ্য পরিবেশ ও বন দপ্তরের প্রধান সচিব, রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের প্রধান সচিব সহ জলপাইগুড়ি – আলিপুরদুয়ার পুলিশসুপারদের পক্ষভুক্ত করা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি শুভাশিস দাশগুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার ভার্চুয়াল শুনানি চলে। সেখানে রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল এবং কেন্দ্রের অতিরিক্ত সলিসিটর ভিডিও কনফারেন্স শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন। প্রধান বিচারপতি সেদিন এজলাসে এই মামলায় হাতি মৃত্যু ঘিরে প্রশ্ন তোলেন – ‘অস্বাভাবিক হাতির মৃত্যুর ক্ষেত্রে শতকরা ৬০ ভাগ ঘটনায় দেখা যায় বিদ্যুৎ এর বলি হয়েছে। এটা কি করে সম্ভব’? চলতি বছরে উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলার বক্সার, হাসিমারা, জলদাপাড়া, গরুমারা, বিন্নাগুড়ি সংরক্ষিত বন গুলিতে একের পর এক বাইসন – হাতি মারা পড়ে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে হয় বিদ্যুৎপৃস্ট কিংবা রেলের ট্রেনের ধাক্কায় মারা পড়ে বন্য প্রাণীরা। তাই গত ৪ সেপ্টেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণন ও বিচারপতি শুভাশিস দাশ গুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলায় রাজ্যের মুখ্য বনপালের কাছে রিপোর্ট তলব করা হয়। দু’সপ্তাহের মধ্যেই জমা দিতে হবে এই রিপোর্ট। অন্তর্বতী নির্দেশে ওই রিপোর্টে জানতে চাওয়া হয়েছে – ‘ বন্যপ্রাণী রক্ষায় মাস্টার প্লানের কার্যকরিতা কতদূর? বন্যপ্রাণী ম্যানেজমেন্টের বর্তমান স্টাটাস কিরকম? উত্তরবঙ্গ সহ রাজ্যের সমস্ত জঙ্গলে ওয়াইল্ড লাইফ ম্যানেজমেন্ট কিভাবে মানা হয়? বিদুৎপৃস্ট হয়ে কেন বারবার মৃত্যু ঘটছে বন্যপ্রাণীগুলির? এইবিধ নানান বিষয়ে বিশদ রিপোর্ট দু সপ্তাহের মধ্যেই জমা দিতে হবে রাজ্যের মুখ্য বনপাল মহাশয় কে। এই মামলায় পক্ষভুক্ত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় পরিবেশ ও বন দপ্তরের প্রধান সচিব, রাজ্যের পরিবেশ ও বন দপ্তরের প্রধান সচিব, রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের প্রধান সচিব, জলপাইগুড়ি এবং আলিপুরদুয়ার জেলার এসপিদেরও।দু’সপ্তাহের পর এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে। বন্যপ্রাণী রক্ষায় কেন্দ্রের এবং রাজ্যের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলির অবস্থান জেনে পুলিশ প্রশাসন কে বন্যপ্রাণীদের মৃত্যু আটকাতে কড়া ভুমিকায় দেখা যেতে পারে এই রাজ্যের সর্বোচ্চ আদালত কে, এইরূপ মনে করছে আইনমহল।