ভূত চতূর্দশীর রাত

Spread the love

ভূত চতূর্দশীর রাত

চায়না মন্ডল (কলকাতা)

      গ্রামের ছেলে মধুবাবু কলকাতায় চাকরি করেন। ছুটিতে সে নিজের বাড়িতে যাবে। তাই সে হাওড়া থেকে বিশ্বভারতী ট্রেন ধরে রামপুরহাটে নামে। রামপুরহাট থেকে রাত দশটায় পাঁচ মাইল ফাঁকা রাস্তা ধরে বাড়িতে যাবে। কিন্তু সেদিন রাত্রি ছিল ভূত চতুর্দশীর রাত। সেই রাতে মধুবাবু একাই রামপুরহাট থেকে গ্রামের বাড়িতে যান। অত রাত্রে কোন যানবাহন নেই। তাই সে একাই রাতে হাঁটতে শুরু করে। ফাঁকা রাস্তা। চারিদিকে ধান ক্ষেত। দূরে দূরে রাস্তার চারপাশে গ্রামে দেখা যায়। মিট্ মিট্ করে আলো জ্বলছে। রাস্তা ঘুটঘুটে অন্ধকার। একাই মধুবাবু হাঁটতে থাকেন।  হাঁটতে হাঁটতে মাঝে মাঝে পিছন দিকে তাকান। তারপর হঠাৎ দেখে ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে ছুটে আসছে একটা আলো তার দিকে। মধুবাবু একটু একটু ভয় পাচ্ছেন ঠিকই,তবুও তিনি  সাহস করে রাস্তায় হাঁটতে থাকেন। ভয়ে সে পিছন দিকে তাকাননা,  সামনের দিকে হেঁটে যান। 

    কিছুক্ষণ পর মধুবাবুকে সেই আলোটি ধাক্কা দিয়ে ছুটে চলে যায়। মধুবাবু পড়ে যান এবং আলোটির থেকে কিছু আগুন নিচে পড়ে যান।সাহসী মধুবাবু সেই আলোটির পিছন পিছন ছুটতে থাকেন। ভূতটি মধু বাবুকে অন্ধকারে দেখতে না পেয়ে ধাক্কা দিয়ে ছুটতে থাকে। ভূতটি মধুবাবুর সঙ্গে ধাক্কা লাগার ফলে ভয় পেয়ে দৌড়ে পালাতে থাকে। দৌড় দৌড় দৌড়। ভূতের পিছন পিছন মধুবাবুও দৌড়ান। দৌড় দৌড় দৌড়।গ্রামের প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছেন। ভূতটির পিছন ছাড়েননা মধুবাবু। পাশেই নিজের গ্রাম।কিন্তু নিজের গ্রামে না গিয়ে ভূতটির পিছনে ছুটতে থাকেন মধুবাবু। দৌড়,দৌড়,দৌড়। ছুটছে তো ছুটছেই ভূত। ভুতের পিছন পিছন ছুটছেন মধুবাবু। দৌড়, দৌড়, দৌড়। মধুবাবুর পাশের গ্রামের ভিতরেই ভূতটি যাচ্ছে। পিছন পিছন মধুবাবুও যাচ্ছেন। কিছুক্ষণ গ্রামের ভিতরে গিয়ে ভূতটি আগুনগুলি ধপাস করে নিচে ফেলল এবং শব্দ হলো। আর আগুনটা জ্বলতে জ্বলতে নিভে গেল। তারপরে ভূতটি ঘরের ভিতর ঢুকে গেল এবং দরজা বন্ধ করে দিল। মধুবাবু ঘরের ভিতরে গেলেননা। তিনি ভালো করে দেখলেন আগুনটা কিসের। মধুবাবু অন্ধকারের মধ্যে আগুনটাকে ভালো করে দেখলেন। তাতে ছিল মালশা( মাটির পাত্র)। তার সঙ্গে নারকেলের ছোবড়া। মধুবাবু ভালো করে দেখে বাড়ির দিকে হাঁটতে শুরু করেন। তখন বাজে রাত বারোটা। গ্রামের বাড়ির রাস্তায় কেউ কোথাও নেই। ওই অন্ধকারের মধ্যেই নিজের গ্রামে যান। আর চিন্তা করেন এত রাত্রে কী ছিল সেটা? মালশা, কিছু নারকেলের ছোবড়া,  পোড়া আগুন,বাড়ির ভিতরে চলে গেল ভূত! 

কিছুই বুঝতে পারলেননা সাহসী মধুবাবু।
অবশেষে বাড়ি তিনি পৌঁছালেন। সারারাত ঘুমোতে পারেননি মধুবাবু।

   পরের দিন সকাল বেলায় তিনি ঘটনাটি সবাইকে বললেন। সবাই তখন বলল, ওর পেছন পেছন তুই ছুটে গেলি, তোর সাহস আছে বটে।সবাই তখন বলল মধু বাবুকে, ভূত চতূর্দশীর রাতে ওই বাড়ির বউ শ্মশানে যায়। মালসার মধ্যে নারকেলের ছোবড়া জ্বালিয়ে তার মধ্যে ধুনো দিয়ে আগুন জ্বালায়।  তারপর শ্মশানে মন্ত্র তন্ত্র করে।  মন্ত্র তন্ত্র হয়ে গেলে ওই আগুন জ্বালানো মালসাটি মাথায় নিয়ে ছুটতে ছুটতে সে বাড়ি যায়। সবাই ওই বউটিকে ভয় পায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *