ভোট পরবর্তী হিংসায় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন রাজ্যে ঘুরবে, জানালো হাইকোর্ট
মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
‘এবার রাজ্যে ভোট পরবর্তী হিংসা জানতে ঘুরবে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা।শুধু তাই নয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট অনুযায়ী রাজ্য ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে রাজ্য কে আদালত অবমাননা মামলার মুখে পড়তে হবে’। ঠিক এভাবেই শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের নেতৃত্বে বৃহত্তর বেঞ্চ রাজ্য কে হুশিয়ারি দিলো।কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখবে। তাদের সাহায্য করবে রাজ্য মানবাধিকার কমিশন বলে জানিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ। এদিন আদালত পর্যবেক্ষণে জানায় – ‘ ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসার কথা স্বীকার করেনি রাজ্য সরকার। কিন্তু আমাদের কাছে যে অভিযোগ জমা পড়েছে। তাতে ভোট পরবর্তী হিংসার প্রমাণ মিলেছে। ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরাতে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মানবাধিকার কমিশন ও রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিসের প্রতিনিধিরা ছিলেন। কিন্তু কেন্দ্রের মানবাধিকার কমিশন প্রয়োজনীয় সহযোগী পাইনি রাজ্যের কাছ থেকে। তাদের কে অসহযোগিতা করা হয়’। এরপর আদালত নির্দেশ দেয় – ‘রাজ্য কে অসহযোগিতা করার দায় নিতে হবে। কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন আদালত কে রিপোর্ট জমা দেবে।এই নির্দেশ না মানলে আদালত অবমাননার মধ্যে পড়তে হবে রাজ্য কে’। এদিন এইবিধ মামলার আবেদনকারীদের আইনজীবী প্রিয়াংকা টিবরেওয়েল জানিয়েছেন – ‘ আমরা বারবার ভোট পরবর্তী হিংসার তথ্য দিয়েছি, তবে তা রাজ্য স্বীকার করেনি।আজ আদালত এইসব অভিযোগের সততার গভীরতা বুঝলো’।ইতিমধ্যেই ৩২৪৩ টি লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস কমিটির কাছে।উল্লেখ্য, চলতি সপ্তাহে বীরভূমের নানুর লাভপুর থানায় ঘরছাড়া ঘরে ফেরানোর বার্তা নিয়ে গিয়েছিলেন এই আইনজীবী। কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে চলছে রাজনৈতিক হিংসায় ঘরছাড়াদের নিয়ে একগুচ্ছ মামলার শুনানি। এই বৃহত্তর বেঞ্চে রয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডাল, বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখার্জি, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সুব্রত তালুকদার।গত শুনানিতে কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ মামলা চলাকালীন জানায় – ‘ প্রত্যেক মানুষ তার নিজের বাড়িতে থাকার অধিকার রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা সুনিশ্চিত করতে হবে রাজ্যকেই’। এরপর রাজ্যের তরফে জানানো হয় – ‘ রাজনৈতিক হিংসায় ঘরছাড়াদের জন্য দ্রুত রাজ্য ইমেলের আইডি তৈরি করছে। সেখানে অভিযোগ জানাতে পারেন ওইসব ঘরছাড়ারা’। একুশে বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের দিন থেকে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক হিংসায় ১৬ জনের বেশি প্রাণহানি ঘটে।পাশাপাশি শতাধিক আহত হয়েছে বিভিন্ন ঘটনায়।হাজার হাজার মানুষ ঘরছাড়া। যদিও শাসক দলের তরফে বিরোধী কর্মী সমর্থকদের ঘরে প্রত্যাবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে বলে দাবি। তবে তাতে সন্তুষ্ট নয় অনেকেই।ঠিক এই রকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের নেতৃত্বে বৃহত্তর বেঞ্চে চলছে ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা গুলির শুনানি। এই বৃহত্তর বেঞ্চে ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্ডালের পাশাপাশি রয়েছেন ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখার্জি, হরিশ ট্যান্ডন, সৌমেন সেন সহ সুব্রত তালুকদারদের মত বিচারপতিরা।গত ৩১ মে কলকাতা হাইকোর্টের এই বৃহত্তর বেঞ্চে রাজনৈতিক হিংসায় ঘরছাড়াদের ঘরে ফেরানোর জন্য তিন সদস্যের এক কমিটি গড়ে দিয়েছিল। যেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের সদস্যদের পাশাপাশি রাজ্য লিগ্যাল সার্ভিস কমিটির সদস্যরা রয়েছেন। গত শুনানিতে রজ্যের তরফে আইনজীবী জানিয়েছেন – ‘৩ মে অবধি রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা দেখার দায়িত্ব ছিল কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের’। উল্লেখ্য, ভোটের ফলাফল পরবর্তী হিংসা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেও বেশ কয়েকটি মামলা চলছে।রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ১৬ এর মত প্রাণ হারান এই রাজনৈতিক হিংসায়। বিরোধী দলের অভিযোগ, শাসক দলের নির্দেশে সুপরিকল্পিত ভাবে হিংসা চালানো হয়েছিল।যদিও তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে – এই রাজনৈতিক হিংসায় তাদেরও অনেকেই প্রাণ হারিয়েছেন।তবে ভোটের ফলাফল প্রকাশের দিন থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে রাজনৈতিক হিংসা চলতে থাকে।লুটপাট অগ্নিসংযোগ মারধর চলে।পরিস্থিতি এমন যে, ভিনরাজ্যে আশ্রয় নেয় বিরোধী দলের কর্মী সমর্থকরা।রাজ্যপাল এইসব ঘরছাড়াদের আশ্রয় শিবিরে পর্যবেক্ষণে গিয়ে বিষয়টি সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে আলোচিত হয়।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চে চলছে এইসব মামলার শুনানি পর্ব। রাজ্যের তরফে ইমেল আইডি করে ঘরছাড়াদের অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে হাইকোর্ট কে জানিয়েছিল রাজ্য।শুক্রবার এই মামলার শুনানিতে বৃহত্তর বেঞ্চ জানায় -‘ কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে দেখবেন।তাঁরা যে রিপোর্ট আদালত কে জমা দেবেন।সেই অনুযায়ী রাজ্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে আদালত আদালত অবমাননা মামলায় রাজ্য কে যুক্ত করবে