ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার ভিন রাজ্য বদলীর আবেদনে সুপ্রিম তোপে সিবিআই 

Spread the love

‘বাংলার আদালত কে অসম্মান ‘

ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার ভিন রাজ্য বদলীর আবেদনে সুপ্রিম তোপে সিবিআই 

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

কখনও আসানসোল আদালতে গরু পাচার মামলায়,  আবার কখনও বা শিয়ালদহ আদালতে কিংবা আলিপুর আদালতে আরজিকর কান্ডে সিবিআইয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক পর্যায়ে পড়ে।এবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টে ‘মুখ’ পুড়লো সিবিআইয়ের। শুক্রবার চরম অস্বস্তি পড়ে যায় এই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা টি।রাজ্য থেকে নির্বাচন পরবর্তী হিংসা মামলা সরানো নিয়ে এবং বিভিন্ন কোর্টের বিচারপদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সুপ্রিমকোর্টে ‘তিরস্কৃত’ হলো সিবিআই। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ আদালত সিবিআইকে মামলা অন্য রাজ্যে সরানোর আর্জি প্রত্যাহার করে নিতে বলেছে।  সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি অভয় এস অকা এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ, ‘সব আদালত বিরোধী হতে পারে না’।বাংলার আদালত  সম্পর্কে সিবিআই-এর  মন্তব্য দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করছে সুপ্রিম কোর্ট । সুপ্রিম  ভর্ৎসনার মুখে আবেদন সংশোধনের প্রস্তাব সিবিআই-এর। আবেদন প্রত্যাহারের নির্দেশ দেশের সর্বোচ্চ আদালতের।ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় রাজ্যের বিভিন্ন আদালতে  একের পর এক অভিযুক্ত জামিন পাওয়া এবং বিচারপদ্ধতি প্রভাবিত হওয়ার অভিযোগ তুলে অন্য রাজ্যে মামলা সরানোর আর্জি জানিয়েছিল সিবিআই। শুক্রবার সুপ্রিম কোর্টের  বিচারপতি অভয় ওকা এবং অগস্টিং জর্জ মাসির বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি চলে । এ রাজ্যের সব আদালতের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করেছে সিবিআই। বাংলার সামগ্রিক বিচার পদ্ধতির ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশ রয়েছে বলেও অভিযোগ জানিয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে কেন্দ্রীয় এজেন্সি পশ্চিমবঙ্গের আদালতগুলির বিরুদ্ধে এমন সন্দেহ প্রকাশ করছে।’ এমনটাই মন্তব্য অভয় এস অকা এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের।সিবিআইয়ের আইনজীবী অ্যাডিশনাল সলিসিটার জেনারেল এসভি রাজুকে সুপ্রিম কোর্টের  বিচারপতিরা প্রশ্ন করেন, ‘আপনারা কী বলতে চাইছেন, বাংলার সব আদালতেই হস্টাইল পরিস্থিতি? ধরুন, আমরা মামলা অন্য রাজ্যে স্থানান্তর করে দিই, তার মানে আমরা এই বক্তব্যে শিলমোহর দিচ্ছি যে পশ্চিমবঙ্গের সব আদালতেই প্রতিকূল পরিস্থিতি এবং বিচারপদ্ধতি কাজ করছে না। আপনার আধিকারিকেরা কোনও রাজ্যকে পছন্দ নাই করতে পারেন, কিন্তু এটা বলবেন না যে সমগ্র বিচারপদ্ধতি কাজ করছে না। নিম্ন আদালতের বিচারক এবং বিচারবিভাগীয় আধিকারিকরা এখানে এসে নিজেদের ডিফেন্ড করতে পারেন না।’ গত ২০২১ সালে বিধানসভা ভোটের পর রাজ্য জুড়ে একাধিক হিংসার ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল রাজ্য সরকার। সুপ্রিম কোর্টে সিবিআই তদন্তের নির্দেশই বহাল রাখে। তবে  মামলাগুলির ভিনরাজ্যে ট্রায়াল চেয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয় সিবিআই। নিম্ন আদালত সম্পর্কে সিবিআইয়ের অভিযোগকে মানহানিকর বলেছেন দুই বিচারপতি। এদিন বিচারপতিদের তিরস্কারের পরই নির্বাচন পরবর্তী হিংসা মামলা রাজ্যের বাইরে স্থানান্তরের আবেদন প্রত্যাহার করেছে সিবিআই।বিচারপতি অভয় এস ওকা ও বিচারপতির অগাস্টিন জর্জ মাসির তীব্র সমালোচনার মুখে সেই আবেদন প্রত্যাহার অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এসপি রাজুর।মামলা অন্যত্র বদলির জন্য আপনারা কি যুক্তি দিলেন? পশ্চিমবঙ্গের সব আদালতের পরিবেশ প্রতিকূল? সর্বত্র আইন না মেনে জামিন দেওয়ার অভিযোগ আনলেন? এমন অভিযোগ আদতে এটাই বলে যে, ওই রাজ্যের বিচার ব্যবস্থার পরিবেশ সম্পূর্ণ প্রতিকূল বা শত্রুতাপূর্ণ। মামলা গ্রহণ করেই মন্তব্য বিচারপতি ওকার। মামলার বয়ানে কিছু ত্রুটি থেকে গিয়েছে। আমরা আবেদনটি সংশোধন করে নেব। রাজুর এই প্রস্তাবে সাড়া দিল না দেশের সর্বোচ্চ আদালত। বাংলার ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সুপ্রিম কোর্টে এদিন কড়া  তোপের মুখে পড়ে  সিবিআই। সাক্ষী ও আইনজীবীদের ভয় দেখানো হচ্ছে। এই অভিযোগ তুলে ২০২১-এর নির্বাচন পরবর্তী হিংসার ৪০টি মামলা রাজ্যের বাইরে সরানোর আর্জি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল সিবিআই। সুপ্রিম কোর্ট  সেই আর্জি প্রত্যাহার করে নেওয়ার নির্দেশ দিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *