মালদায় জমি অধিগ্রহণের কেন্দ্রীয় আইন কার্যকর না করায় স্থগিতাদেশ জারী করলো হাইকোর্ট
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
জমি অধিগ্রহণ নিয়ে বিপাকে পড়লো জাতীয় সড়ক বিভাগ। শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরী জমি অধিগ্রহণ সম্পর্কিত এক মামলায় উত্তরবঙ্গের মালদা জেলায় জাতীয় সড়ক নির্মাণে স্থগিতাদেশ জারী করলেন।জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কেন্দ্রীয় আইনে ক্ষতিপূরণ না দেওয়া অবধি নুতন করে রাস্তা সম্প্রসারণ নয় বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। মালদায় দুই জাতীয় সড়ক যুক্ত করার ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা গেল, কারণ কলকাতা হাইকোর্ট সড়কের জন্য অধিগৃহীত জমি দখলে স্থগিতাদেশ দিয়েছে। হাইকোর্ট জানিয়েছে , -‘ কেন্দ্রীয় সরকারের ২০১৩ সালের আইন মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি। তাই এই সিদ্ধান্ত’। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে , -‘এই কাজে এখন দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা বজায় থাকবে’। ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় সংশোধিত আইন না মানায় জাতীয় সড়কের জন্য জমি অধিগ্রহণের উপর স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট । পুরো আইনে জমি অধিগ্রহণ এবং বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জমির নিয়ম না মানায়, এই স্থগিতাদেশ জারি করল আদালত ।কেন্দ্রের ২০১৩ সালের সংশোধিত জমি অধিগ্রহণ আইন মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি মালদা জেলায় ।সেই কারণে জাতীয় সড়কের জন্য অধিগৃহীত জমির দখলে স্থগিতাদেশ জারি করল কলকাতা হাইকোর্ট । বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর সিঙ্গল বেঞ্চ শুক্রবার এই নির্দেশ দিয়েছে । এই নির্দেশের ফলে মালদায় দু’টি জাতীয় সড়ক যুক্ত করার যে কাজ হচ্ছে, সে ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হল বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা । বিচারপতি সবপক্ষের বক্তব্য শোনার পর এদিন জানিয়েছেন, -‘ কেন্দ্রের নতুন জমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী, জমিদাতাকে সব নিয়ম মেনে ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত জমির দখল নেওয়া যাবে না ‘। আদালত সুত্রে প্রকাশ, মালদার চাঁচলে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কে একটি বাইপাস তৈরির জন্য জমির অধিগ্রহণ শুরু করে কেন্দ্র । সেই জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়ায় একটি ইটভাটাও তার আওতায় চলে আসে । কিন্তু, অভিযোগ জাতীয় সড়ক বিভাগ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৯৫৬ সালের পুরনো আইনকে হাতিয়ার করে । তাতে আপত্তি জানিয়ে জাতীয় সড়ক বিভাগের বিরুদ্ধে শালিশী বা আরবিট্রেশনে যান ওই জমির মালিক আদর্শ কুমার । কিন্তু, সেখানে কোন রায়দান হয়নি । এর পর ওই ইটভাটা মালিক কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন ।কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর এজলাসে শুনানিতে তাঁর আইনজীবী শ্রীজীব চক্রবর্তী এবং অরিন্দম দাস অভিযোগ করে জানান, -‘ ২০১৬ সালে ওই জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিশ দেওয়া হয় । ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে অধিকৃত জমির জন্য ২০১৩ সালের আইন মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা । এক্ষেত্রে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ মানেনি । এমনকি ওই জমি যে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহার করা হত, তার কোন উল্লেখ করা হয়নি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে’ ।নতুন আইনে জমি অধিগ্রহণ করতে হলে গ্রামীণ এলাকায় বাজার দরের তুলনায় চার গুণ এবং শহরের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ দাম দেওয়ার কথা জমিদাতাকে । একই সঙ্গে অধিগৃহীত জমির জন্য জমিদাতাকে বিকল্প জায়গায় বাসস্থান তৈরি করে দেওয়া উল্লেখ করা হয়েছে ২০১৩ সালের সংশোধিত আইন অনুযায়ী । বাস্তবে এর কোনটাই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ মানেনি বলে অভিযোগ করেন আইনজীবী অরিন্দম দাস ও শ্রীজীব চক্রবর্তী। রাজ্যের কাজে জমি গ্রহণের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার কেন্দ্রের এই নতুন আইন না মানায়, কয়েক হাজার মামলা ঝুলে রয়েছে বিভিন্ন আদালতে । এবার কেন্দ্রের জাতীয় সড়ক বিভাগও এখন সেই একই অভিযোগে অভিযুক্ত হলো । মালদার চাঁচলে ৮১ নম্বর জাতীয় সড়কের একটি বাইপাস তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু করে কেন্দ্র। এক্ষেত্রে ওই ইটভাটাও অধিগ্রহণের আওতায় চলে আসে। কিন্তু জাতীয় সড়ক বিভাগ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ১৯৫৬ সালের পুরনো আইনকে সামনে রেখেছিল। তাতে আপত্তি জানান ওই জমির মালিক। প্রাথমিকভাবে কোনও সুরাহা না হওয়ায় অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। আদালতে দাবি করা হয়, ২০১৬ সালে ওই জমি অধিগ্রহণের জন্য নোটিস দেওয়া হয়েছিল। ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের পর থেকে অধিকৃত জমির জন্য ২০১৩ সালের আইন মেনে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। কিন্তু এক্ষেত্রে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সেই নির্দেশ মানেনি।নতুন আইনে জমি অধিগ্রহণ করতে হলে গ্রামীণ এলাকায় বাজার দরের তুলনায় চার গুণ এবং শহরের ক্ষেত্রে দ্বিগুণ দাম দেওয়ার কথা। একই সঙ্গে অধিগৃহীত জমির জন্য জমিদাতাকে বিকল্প জায়গায় বাসস্থান গড়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু এর মধ্যে কোনওটাই হয়নি। তাই কলকাতা হাইকোর্ট স্থগিতাদেশের নির্দেশ দিয়েছে।এখন দেখার জাতীয় সড়ক বিভাগ এই নির্দেশ কতটা কার্যকর করে?