মোল্লা জসিমউদ্দিন,
একাধারে তিনি শাসক দলের মঙ্গলকোটের বিদায়ী বিধায়ক তথা রাজ্যের গ্রন্থাগার মন্ত্রী, অপরদিকে তিনি জমিয়ত উলেমা হিন্দের রাজ্যের সর্বাধিনায়ক। তিনি শাসক দলের অন্যতম সংখ্যালঘু মুখও বটে। হ্যাঁ, এবারের একুশে বিধানসভা নির্বাচনে মন্তেশ্বর (২৬৩ নং বিধানসভা আসন) কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে রয়েছে বছর তিন পুরাতন মামলায় একটি ওয়ারেন্ট। তবে এই ওয়ারেন্ট টি অভিযুক্ত হিসাবে নয়, অভিযোগকারী হিসাবে।তিনি বছর তিন আগে মঙ্গলকোটের এক ঘটনায় সুবিচার চেয়ে পুলিশের দারস্থ ( এফআইআর) হয়েছিলেন। অথচ গত তিন বছরে বার বার সমন পেয়েও আদালতমুখি হননি।তাই সংশ্লিষ্ট আদালত এই মামলার বিচারপ্রক্রিয়ায় গতি আনতে বছর দুই আগে ওয়ারেন্ট জারী করে। এটি একপ্রকার আদালত অবমাননার সামিল বলে মনে করছেন বর্ষীয়ান আইনজীবীরা।কাটোয়া মহকুমা আদালতে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ( ২য়) এজলাসে জিআর ১০৫/১৮ মামলায় এই ওয়ারেন্ট টি রয়েছে মন্তেশ্বর বিধানসভার নির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। তিনি কেন অভিযোগ এনেও বিচার চাইছেন না, তা নিয়ে উঠছে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন। অথচ এফআইআর কপিতে তিনি শেষের দিকে লিখেছেন ‘ওরা আমার জীবনের ক্ষতি করতে চায়’। যারা জীবনের ক্ষতি করতে চেয়েছিল এবং পুলিশি কনভয়ের মধ্যেও তৃনমূলের পতাকা হাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ বলে গাড়ির কাঁচ ভেঙে ছিল ইটের আঘাতে।তাদের বিরুদ্ধে আদালতে বিচারপ্রক্রিয়ায় কেন অনিহা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর।অথচ পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে অত্যন্ত দক্ষতার সাথে শান্তিশৃঙ্খলা ঠিক করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল।তাতে কি হবে মামলাকারীই আদালতে বারবার সমন পেয়েও তাঁর অভিযোগপত্র অনুযায়ী বক্তব্য বা তথ্য প্রমাণ সম্মুখে আনতে অপারগ। শাসক দলের মন্ত্রী হয়েও রাজনৈতিক কোন অংকে তিনি নীরব এই মামলায় তা নিয়ে বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছেন। আদালত সুত্রে জানা যায়, গত ০৪/০২/১৮ তারিখে মঙ্গলকোটের কাশেমনগরে বৈরাগী মেলায় অশান্তি রুখতে শান্তিসভা করতে গিয়েছিলেন মঙ্গলকোটের বিদায়ী বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। কাশেমনগর থেকে ফিরবার পথে কাশেমনগর – নুতনহাট সড়ক পথে দলের বিক্ষুব্ধ নেতৃত্বের সামনে বিক্ষোভে পড়েন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। অভিযুক্তেরা শাসক দলের পতাকার পাশাপাশি জুতো ঝাঁটা নিয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করে এই বিধায়কের বিরুদ্ধে। ইটের আঘাতে মন্ত্রীর গাড়ির কাঁচও ভাঙ্গে।পাইলট কার থাকা সত্বেও এই ঘটনা! তবে মঙ্গলকোট থানার পুলিশ অত্যন্ত দক্ষতার সাথে ঘটনাস্থলের অশান্তি নিয়ন্ত্রণে আনে।এরপর মন্ত্রী তাঁর বিধায়ক পদের প্যাডে ‘প্রিয় ওসি’ সম্বোধনে এফআইআর টি জমা দিয়েছিলেন। এফআইআর দাখিলে কারও কোন ব্যক্তিগত প্যাড তাও সরকারি প্যাড ( বিধায়ক) ব্যবহার করা যায় কিনা তা নিয়েও আইনজীবীদের একাংশ প্রশ্ন তুলেছেন। পাশাপাশি কোন থানার ওসি কে মহাশয় /স্যার কিংবা প্রতি না লিখে ‘প্রিয়’ সম্বোধন করা যায় কিনা, তাতেও আইনী প্রশ্নচিহ্ন দেখা যায়। ঘটনা যাই হোক, মঙ্গলকোট থানার পুলিশ ৩৪ আইপিসিতে ৩৪১, ৫০৬ এবং ৪২৭ নং ধারায় মামলা রুজু করেছিল। পাশাপাশি কাটোয়া মহকুমাআদালতে চার্জশিট দাখিলে ৩৪১ এবং ৫০৬ নং ধারা টি বজায় রেখেছিল।সংশ্লিষ্ট আদালতে অভিযুক্তেরা (৮ জন) জামিনও নিয়ে নেয়।এবং আদালত দ্বারা হাজিরার দিন গুলিতে সশরীরে হাজিরাও অব্যাহত রাখে।তবে মামলা গ্রহণের প্রথম থেকেই অভিযোগপত্র লেখা ছাড়া অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিদানে কোন আগ্রহ দেখাননি সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। আদালত সময়ের ব্যবধানে একের পর এক সমন পাঠিয়েও আদালতে কোনবারের আসেননি মামলাকারী মন্ত্রী। তাই মামলার দ্রুত নিস্পত্তি ঘটাতে বছর দুই আগে ওয়ারেন্ট ইস্যু করে পূর্ব বর্ধমান জেলার কাটোয়া মহকুমা আদালতের সেকেন্ড জেএম এজলাস। ওয়ারেন্ট জারী পর অন্তত চারটি ‘দিন’ ( হাজিরা) পড়েছিল।তাতেও আসেননি মামলাকারী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। যা একপ্রকার আদালত অবমাননার সামিল।একজন দায়িত্বশীল রাজ্যের বিদায়ী মন্ত্রী হয়েও এহেন আদালত কে এড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতা আইনীর চোখে যথাযথ নয় বলে আইনজীবীরা মনে করছেন।অভিযোগকারীর বাড়ি কলকাতায় হলেও তাঁর একদা নির্বাচনী ক্ষেত্র ছিল এই মঙ্গলকোট যা কাটোয়া মহকুমার অধীন। আবার তাঁর পৈতৃক ভিটা করজগ্রামও পড়ছে কাটোয়া থানার অধীনে। তাহলে সংশ্লিষ্ট আদালতের আশেপাশে তাঁর যাতায়াত থাকলেও আদালত মুখি কেন হননি তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।এবারে তিনি মন্তেশ্বর বিধানসভার কেন্দ্রে (২৬৩) তৃণমূল প্রার্থী তিনি।কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন কে দেওয়া হলফনামায় অবশ্য এই মামলার (কাটোয়া মহকুমা আদালত,সেকেন্ড জেএম এজলাস – জিআর ১০৫/১৮) কোন তথ্য দেননি প্রার্থী। যদিও মঙ্গলকোটের তৃণমূল নেতারা জানিয়েছে – ‘ এই মামলার যাবতীয় তথ্য আমরা উনা কে জানিয়েছি’। তবে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর সাথে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোন মন্তব্য মিলেনি।