খায়রুল আনাম
জন্মদিনে বোলপুর-শান্তিনিকেতনের যে পথে গান্ধীজি
পরাধীন ভারত থেকে স্বাধীন ভারতের উত্তরণ দেখে যেতে পারেননি গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আবার ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে সবচেয়ে চর্চিত চরিত্রের মানুষ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী ভারতের ভাগ্যাকাশে স্বাধীনতার সূর্যোদয় দেখলেও, তা খুব বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। মহাত্মা গান্ধীর জীবনকাল ২ অক্টোবর-১৮৬৯ থেকে ৩০ জানুয়ারি-১৯৪৮। আর ভারতের স্বাধীনতা লাভ ঘটে ১৫ আগস্ট-১৯৪৭। মহাত্মা গান্ধী তাঁর জীবদ্দশায় একাধিক বার শান্তিনিকেতনে এসেছেন গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাছে। একদা পরাধীন ভারতের বোলপুর-শান্তিনিকেতন এলাকায় স্বাধীনতাকামী মানুষদের কাছে এবং বিপ্লবীদের কাছে মহাত্মার গ্রহণযোগ্যতা ছিলো প্রশ্নাতীত। আবার পরবর্তীতে দেখা গিয়েছে, এই এলাকায় সুভাষচন্দ্র বসুর অনুগামীর সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। একটা সময় বোলপুরের রাজনৈতিক পরিবেশ ছিলো গান্ধী আদর্শে অনুপ্রাণিত। তাঁরই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে এখানে এসেছেন অধ্যাপক নির্মলকুমার বসু, খান আব্দুল গফফর খান প্রমুখ। গান্ধীজি ১৯২৫ সালের ২১ মে শান্তিনিকেতনে আসেন তাঁর ‘ চরকা-খদ্দর নীতি’-র প্রচারে। সেই সময় তিন দিন ধরে তিনি গুরুদেবের সাথে শান্তিনিকেতনে বসে এবিষয়ে মতামত বিনিময় করেছেন। আবার স্বস্ত্রীক শান্তিনিকেতনে এলে সুভাষচন্দ্র বসুর অনুগামীরা তাঁকে বোলপুর রেল স্টেশনেই আটকে দেন। ১৯৩৯ সালের ২ ফেব্রুয়ারি সুভাষচন্দ্র বসু সম্বর্ধিত হন বোলপুর-শান্তিনিকেতনে। আর স্বস্ত্রীক গান্ধীজি শান্তিনিকেতনে আসেন ১৯৪০ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি। সেই সময় সুভাষচন্দ্র বসুর প্রতি অনুরক্ত ‘স্বদেশ-সেবক’-রাই এমনটা করেছিলেন। শেষ পর্যন্ত উদ্বিগ্ন রবীন্দ্রনাথের বার্তা পেয়ে ব্রিটিশ পুলিশ বোলপুর রেল স্টেশনে রবীন্দ্রনাথের পাঠানো ‘ফোর্ড’ গাড়িতে চাপিয়ে স্বস্ত্রীক গান্ধীজিকে শান্তিনিকেতনে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করে। তাই বোলপুর রেল স্টেশন থেকে শান্তিনিকেতনের রাস্তা আজও স্মৃতিময় হয়ে আছে মহাত্মা গান্ধী, সুভাষচন্দ্র বসু প্রমুখ বরেণ্য মানুষদের স্মৃতিতে। সেই শান্তিনিকেতন রোডেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তি। সেখানেই তাঁর জন্মদিনে নিবেদিত হলো তাঁর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য ।।
ছবি : বোলপুরে গান্ধীমূর্তি।