সংস্কার বনাম প্রতিবাদ

Spread the love

সংস্কার বনাম প্রতিবাদ

শম্পা মহান্তি (ভবানীপুর, কলকাতা)

কেউ সোস্যাল মিডিয়াতে কম প্রতিবাদ মুখর হচ্ছে মানে এই নয় যে তিনি অন্যায়ের সঙ্গে আপোষ করছেন। কিছু মানুষ হতে পারে মানসিকভাবে ক্লান্ত, হতে পারেন ব্যক্তিগতভাবে নানাবিধ সমস্যায় রয়েছেন। হতে পারেন কেউ চিকিৎসাধীন, হতে পারেন কেউ নিজের পরিবারের কাউকে হারিয়েছেন। হতে বহু কিছুই পারে!

অনেকেই সোস্যাল মিডিয়া দেখে মানুষকে বিচার করে বসছেন। কেউ কেউ তো রকমারি রাজনৈতিক রঙ লাগিয়ে দিচ্ছেন। আবার কেউ কেউ শোস্যাল মিডিয়াতে নানাবিধ পোস্ট রিল করছেন মানেই তিনি হেব্বি প্রতিবাদ করছেন বলেও ধরে নেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ রিল বানিয়ে ফেলছেন কোনো একটা বলিউড বা হলিউডের কোন একটা অংশবিশেষের কাটিং করে। তিনিও নাকি হেব্বি প্রতিবাদী হয়ে যাচ্ছেন। 

বাস্তবে এক শ্রেণীর মানুষ নিজেই উকিল নিজেই বিচারক হয়ে যাচ্ছেন। তবুও বিভিন্ন ক্ষেত্রে পারিবারিক শিক্ষা, সংস্কৃতি সঠিকীকরণ হচ্ছে না। মানুষ অন্যায় হলেই সবকিছু শক্তি নিয়ে প্রতিবাদী হয়ে পড়ছেন কিন্তু অন্যায় করার মানসিকতার বিলোপ হবে কোন পথে সেসব নিয়ে ভাবচ্ছেন না। সংশোধন হওয়া তো দূরের কথা।

বাড়িতে যিনি বউকে ধরে মদ্যপ অবস্থায় মারধোর করছেন তিনিও বিচার চাইছেন। যে ছেলেটি কলির কেষ্ট সেজে বহু প্রেম করছে, কত মেয়েকে পলিশ করে সম্মানহানি করছে সেও বিচার চাইছে। যে মেয়েটি বিনা অপরাধে কোন পুরুষের থেকে খোরপোষ নিচ্ছে সেও বিচার চাইছে। যে মেয়েটি কারোর সুস্থ ঘর সংসার ভেঙ্গে পরকিয়া করছে সেও বিচার চাইছে। যে পুরুষটি রাস্তাঘাটে চোখের দৃষ্টিভঙ্গিতে মেয়েদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের মাপ বুঝে নিচ্ছে সেও বিচার চাইছে। যিনি অফিসের বসকে বশে রেখে প্রমোশন নিচ্ছেন সেও বিচার চাইছে।

 না এসব কি আর অন্যায় ? এসব তো মানুষের স্বাভাবিক চিন্তাধারার বাস্তবিক প্রয়োগ। এসব তো আমরা সকলেই কমবেশি বুঝে দুচোখের পাতা আধা খোলা রেখে বলেই থাকি, 'ওসব কিছু ব্যাপার নয়'। এটা আধুনিক যুগ ভাই। এখানে মেয়েদের বুকের ভাঁজ দেখা গেলেও কিছু নয় আর কোন ছেলে সেসব দেখে তাকে মাল ভাবলেও কোন কিছু নয়।

একবার ভেবে দেখুন তো কোন কিছুতেই তো কিছু নয়। কিন্তু মানসিকতা যে ধীরে ধীরে রোগগ্রস্থ হচ্ছে সেটার কি হবে। যখনই ছোটবেলার নেগেটিভ শিক্ষার সাথে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি মিলেমিশে একাকার হয়ে যাচ্ছে তখন কোথাও কেউ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, কেউ আবার হারিয়ে যাচ্ছেন চিরতরে।

 আমরা নাকি সভ্য হয়েছি। মানসিকতা অতীব আধুনিক হয়েছে। কিন্তু বহু ক্ষেত্রে নিজের ভেতরের সংস্কার অন্ধকারে ঢিল ছোঁড়া অবস্থায় পড়ে রয়েছে। একটা প্রজন্মের কাছে হাতের নীলসাদা যন্ত্রটি বাস্তবের শিক্ষা মানবিকতা থেকে ধীরে ধীরে বড়ো হয়ে উঠেছে। সেখানে যেনো এক অসুস্থ প্রতিযোগিতা প্রতিবাদের নাম নিয়ে দাপাদাপি করে চলছে। 

প্রতিবাদ হোক রকমারি রঙ ছাড়া। নিজের পরিবারের অন্তরমহল থেকে। নিজের চেনা অলিগলির অন্ধকারে থাকা কু’শিক্ষার বিরুদ্ধে। হোক দৃষ্টিভঙ্গির আলোতে। তাহলে তো কোন একজনকে অসম্পূর্ণ হতে হয় না। কোনোরকম নেগেটিভ কিছু হলে বা হতে চললেই তার চারপাশের সংস্কার তখন রে রে করে এগিয়ে আসবে তাকে বাঁচাতে। তার সম্মান রক্ষা করতে। মানবসম্পদের অপচয় হবে না বিনা কারণে।

 হোক সেসব। শুধুমাত্র লোক দেখানো সোস্যাল মিডিয়ার বাইরে বাস্তবে। যার রিল এডিটিং হবে না কোন মুভির সাথে জুড়ে। 

কোনোরকম রাজনীতি ছাড়া সুস্থ সমাজ গঠনের পথে…..আগামির প্রজন্মের হাতে থাকবে কি সেই মশাল?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *