সন্দেশখালির পুরাতন তিন খুনের মামলায় আদালত অবমাননার হুশিয়ারি হাইকোর্টের
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
বিগত কয়েক মাসের মধ্যে সংবাদ শিরোনামে এসেছে বসিরহাটের সন্দেশখালি। ইডির উপর পরিকল্পিত হামলার অভিযোগ থেকে জমি লুটের অভিযোগ। এত অভিযোগের মধ্যে চাপা থাকা তিনটি খুনের মামলায় পুলিশি তদন্তে অনাস্থা রেখে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছে নিহতদের পরিবার।সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে উঠে এই মামলাটি। সন্দেশখালিতে বিজেপি নেতা খুনের মামলায় কলকাতা হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের সমস্ত বিচার প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ দিয়েছিল। এই নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। কিন্তু বর্তমানে অভিযোগ উঠেছে,-‘ হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করা হয়েছে’।বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ। রাজ্য পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন খোদ বিচারপতি। সন্দেশখালিতে তিন বিজেপি কর্মী খুনের মামলায় রাজ্যের ভূমিকায় ক্ষুব্ধ বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত । বিচারপ্রক্রিয়ায় আদালতের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ থাকা সত্ত্বেও কীভাবে নিম্ন আদালতে অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিল রাজ্য পুলিশ ?কলকাতা হাইকোর্ট নিম্ন আদালতের বিচার প্রক্রিয়ার উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার পরও পুলিশ ওই মামলায় অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দিয়েছে বলে অভিযোগ। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অমান্য করে কী ভাবে চার্জশিট নিম্ন আদালতে জমা দেয় পুলিশ? এই প্রশ্ন তুলেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিচারপতি। তিনি আদালত অবমাননার রুল জারি করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। আগামী বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে । ওই দিন মূল কেস ডায়েরি আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। গত ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের পর ৩ বিজেপি কর্মী খুনের ঘটনায় ন্যাজাট থানায় খুন ও অস্ত্র আইনে শেখ শাহজাহানের বিরুদ্ধে মামলা হয়। নিহত বিজেপির স্থানীয় নেতাদের নাম ছিল সুকান্ত মণ্ডল, তপন মণ্ডল এবং প্রদীপ মণ্ডল। এই ঘটনার পর বেশ কিছুদিনের জন্য গা ঢাকা দিয়েছিলেন শেখ শাহজাহান। কিন্তু তারপরই তাঁকে ফের জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের সঙ্গে দেখা গেছিল। এরপর আদালত থেকে জামিন নেন শাহজাহান।পরবর্তী সময়ে সিআইডি খুনের মামলায় তদন্ত শুরু করার পর চার্জশিট থেকে শাহজাহানের নাম বাদ দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। বিজেপির দাবি , -:অভিযোগপত্রে নাম থাকা সত্ত্বেও শেখ শাহজাহানের নাম ছিল না চার্জশিটে’। এই সংক্রান্ত মামলার গত শুনানিতে রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল হাইকোর্ট। ‘শাহজাহানকে আড়াল করছে রাজ্য’, এমনই পর্যবেক্ষণ রয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের।এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে বিচারপতি জানিয়েছেন , -‘ তদন্তকারী আধিকারিকের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করব?’ বিচারপতির পর্যবেক্ষণ, ‘নিম্ন আদালত কী ভাবে চার্জশিট গ্রহণ করল? অবিলম্বে ওই অতিরিক্ত চার্জশিট প্রত্যাহার করা উচিত।’ গত ১৭ জানুয়ারি নিম্ন আদালতে বিচারপ্রক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ। আগামী বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে ।এর আগেও এই মামলায় প্রশ্নের মুখে পড়েছে পুলিশের ভূমিকা। গত মাসের শেষ দিকেও মামলার শুনানি চলাকালীন পুলিশের ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। কেন ওই তিন বিজেপি কর্মী খুনের মামলার চার্জশিটে শেখ শাহজাহানের নাম বাদ গিয়েছে? এই নিয়ে সে বার তীব্র সমালোচনা করে হাইকোর্ট। প্রতুত্তরে পুলিশ জানিয়েছিল, -‘ শাহজাহানের নাম করলেও, সাক্ষীরা বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। তাই শাহজাহানের নাম চার্জশিট থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে’। একথা শুনে গত শুনানি পর্বে ক্ষুব্ধ বিচারপতি বলেছিলেন, -‘ আপনিই সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলেন যে, সাক্ষী বিশ্বাসযোগ্য নয়!’ তার পর এদিন ফের ক্ষোভপ্রকাশ করলেন বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত।আগামী বুধবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।