সারদা দুর্নীতির তিন মামলায় বেকসুর খালাস সুদীপ্ত – দেবযানী
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
মঙ্গলবার সারদা কেলেঙ্কারির তিনটি মামলা থেকে ১২ বছর পর বেকসুর খালাস হলেন সুদীপ্ত সেন । সারদা মামলায় রাজ্য সরকারের তরফে তদন্ত হওয়া কলকাতা পুলিসের প্রথম তিনটে হেস্টিংস থানার মামলায় বেকসুর খালাস দেওয়া হল সুদীপ্ত সেন ও দেবযানীকে। ৫০ জন সাক্ষ থাকলেও ১৫ জন মাত্র সাক্ষ্য দেন।তাদের সাক্ষ্যে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। রাজ্যের আইনজীবী তরফে অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করতে ব্যর্থ হয়েছে।২০১৩ সালে দায়ের হওয়া এই তিন মামলায় অভিযোগ ছিল, প্রায় ১০ থেকে ১৫ লক্ষ টাকার প্রতারণা করেছেন তাঁরা।মঙ্গলবার আদালত জানায়, এই মামলায় কলকাতা পুলিস প্রতারণার অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। সারদা সংক্রান্ত আরও কয়েকটি মামলা কলকাতা পুলিসের হাতে আছে বলে জানা গেছে । এ দিন রায় ঘোষণার পরে হাসতে দেখা যায় সুদীপ্ত ও দেবযানীকে। কলকাতার হেয়ার স্ট্রিট থানায় ২০১৩ সালে রাজ্য সরকার মামলা করে। তিন আমানতকারীর অভিযোগের ভিত্তিতে হয় মামলা হয়। সেই মামলাতেই স্বস্তি পেলেন দুজন।সুদীপ্ত-দেবযানীর বিরুদ্ধে মোট ২৫০টি মামলা রয়েছে রাজ্যের করা। এর মধ্যে ২১৪টি মামলায় জামিন পেয়েছেন তাঁরা। বাকি মামলায় জামিন পাননি। এরফলে এদিন বেকসুর খালাস হওয়ার পরও দুজনকেই জেলে থাকতে হবে। প্রেসিডেন্সি জেলে রয়েছেন সুদীপ্ত। এ রাজ্যে সারদা মামলার তদন্ত করছে ইডি ও সিবিআই। সারদা মামলায় যখন বেশ কয়েকজন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে সিবিআই, তখন নিজের দোষী স্বীকার করে নিয়েছেন সুদীপ্ত। আদালতে তিনি জানিয়েছেন, সারদা কোম্পানীর কর্মীদের বেতন ও পিএফের টাকা জমা দিতে পারেননি।মঙ্গলবার প্রথম তিন মামলায় সুদীপ্ত এবং দেবযানীকে বেকসুর খালাস করে ব্যাঙ্কশাল কোর্ট।অবশ্য দুজনের বিরুদ্ধে বহু মামলা এখনও বিচারাধীন রয়েছে। সারদার বিরুদ্ধে প্রতারণার বিরুদ্ধে ২৫০টিরও বেশি মামলা হয়েছে।পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারের দুই তদন্তকারী সংস্থা ইডি ও সিবিআইয়েরও মামলা রয়েছে। তাই সারদার বিরুদ্ধে ওঠা প্রথম তিনটি মামলায় বেকসুর খালাস পেলেও এখনই জেল থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না সুদীপ্ত-দেবযানীরা।আদালতের রায় ঘোষণার পর অভিযুক্ত দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের আইনজীবী শুভজিৎ বল জানিয়েছেন, ”তাঁর মক্কেল দেবযানী মুখোপাধ্যায় এবং অন্য অভিযুক্ত সুদীপ্ত সেনের বিরুদ্ধে ওঠা তিনটি মামলায় দুজনকেই বেকসুর খালাস করেছে। প্রসিকিউশনের হয়ে ১৫জন মতো সাক্ষ্যদান করেছিল। কিন্তু ভারতীয় সংবিধানের ৪২০ ও ৪০৬ ধারার মামলায় অভিযুক্তকে অপরাধী প্রমাণ করতে যে তথ্য দরকার তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে প্রসিকিউশন। ”এদিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে তিনটি মামলায় বেকসুর খালাস হওয়ার পর দেবযানীর মা শর্বরী মুখোপাধ্যায় জানা, ”সত্যের জয় কিছুটা হলেও হয়েছে। সময় লাগছে। এই মামলায় সময় লাগার কথা নয়, তা-ও লাগছে। মেনে নিয়েছি। আজ প্রথম কোনও মামলায় খালাস হল। এই রায়ের জন্য়েই হয়তো অন্য মামলাতেও খালাস হবে।” পাশাপাশি তিনি আরও জানান, “সময়কে মেনে নিতে হয়েছে। সময়ে বিচার পাইনি। বিচারে দেরি হচ্ছে। কারণ আমি কোনও দিনই বলব না। আমার মেয়ে কোনও দিনই মুখ খুলবে না। ১৩ বছর হয়ে গিয়েছে, এখনও খুলবে না।” এর বেশি আর কিছু বলতে চাননি তিনি।২০১৩ সালে সারদাকাণ্ড নিয়ে রাজ্যজুড়ে তোলপাড় পড়ে যাওয়ার পর দেবযানীকে নিয়ে কাশ্মীরের সোনমার্গে লুকিয়ে ছিলেন সারদা মালিক সুদীপ্ত সেন। ভূস্বর্গ থেকেই গ্রেফতার করা হয় দুজনকে। ২০২৩ সালে প্যারোলে কয়েক ঘন্টার জন্য ছাড়া পেয়েছিলেন দেবযানী। রাজ্যের বিভিন্ন থানায় প্রতারিতরা অভিযোগ জানান সারদার বিরুদ্ধে। পরবর্তীকালে দুই কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি সিবিআই এবং সেবিও মামলা করে সুদীপ্ত-দেবযানীর বিরুদ্ধে।