মোল্লা জসিমউদ্দিন,
একুশে বিধানসভা নির্বাচনে সংখ্যালঘু তথা আদিবাসী – দলিত হিন্দুদের নেতা হিসাবে ক্রমশ পরিচিতি পাচ্ছেন ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজান। ভাঙরে আক্রান্ত পরবর্তী পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকি কে নিয়ে শুধু রাজ্য রাজনীতি নয় সর্বভারতীয় রাজনীতিতে নুতন আবেগ তৈরি হয়েছে। যা পশ্চিমবাংলার সংখ্যালঘু বলয়ে আজ পর্যন্ত তেমন দেখা যায়নি বলে বিভিন্ন মহলের অভিমত ।বিভিন্ন সোশাল মিডিয়ায় বিশেষত ফেসবুকে ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজানের ফলোয়ার, ভিউয়ার এবং শেয়ারের খতিয়ান দেখলে বাস্তবতা অনেকখানিই মিলবে।ব্রিগেডে সংযুক্ত মোর্চার সমাবেশে যেভাবে দেশের লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা মুর্শিদাবাদের রবিনহুড কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরীর চোখেচোখ রেখে আসন সমঝোতার ভাগীদারী চেয়েছেন। তাতে কংগ্রেস হাইকমান্ড পর্যন্ত বেশ কিছু নিজেদের আসন ছেড়েছে আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজানের সেকুলার ফ্রন্ট কে।একদা শাসকদল বামেরাও ত্রিশ টি আসন ছেড়েছে এই পীরজাদার দল কে।গত রবিবারে বিজেপির ব্রিগেডে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সভায় বেশিরভাগ বক্তায় ভাইজানের নিন্দায় ছিলেন মুখর।সর্বপরি একুশে বিধানসভা ভোটে যেখানে ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজান কে নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে পড়ছে। সেখানে শাসক দল তৃণমূলের সংখ্যালঘু নেতা তথা জমিয়ত উলেমা হিন্দের সভাপতি মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তাঁর অতীতের নিজস্ব কারিশ্মা ক্রমশ বিলিনের পথে।বিগত বাম জমানায় বীরভূমের সিউড়ির পুলিশ লাইনের মাঠে ( কলকাতার বিগ্রেডের মত) কয়েক লক্ষ অনুগামী এনে যে রাজনৈতিক চমক দিয়েছিলেন। সেই সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী এবারে মন্তেশ্বরে তৃণমূল প্রার্থী হয়ে প্রচারে স্থানীয় নেতৃত্ব কে ‘পাশে’ পাচ্ছেনা ঠিকমতো । মঙ্গলকোটে একদা বিধায়ক সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর অনুগামীরা তাঁকে ‘লালবাতির গোলাম’ বলেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কেননা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর হয়ে রাজনৈতিক মাঠে নামতে গিয়ে গাঁজা সহ অস্ত্র মামলায় মঙ্গলকোটে অনেকেই এখনও জেলে বন্দি,সন্ত্রাসের শিকার হয়েছিলেন ।তাঁদের পরিবারদের কেউ কেউ – সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী কে ‘বেইমান’ বলে জানাচ্ছেন। এমনকি মাস খানেক আগে মঙ্গলকোটে জেলবন্দি পরিবারের সাথে দেখাও করেছিলেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। যদিও সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বরাবরই বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মন্ডলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ করে গেছেন।সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী মঙ্গলকোটে প্রতি পদে পদে হেনস্থা হয়েছিলেন। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – গত বিধানসভা অর্থাৎ ২০১৬ সালের আগে যেভাবে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তাঁর রাজনৈতিক দল পিডিএসআই এর পক্ষে একশো আসনে প্রার্থী ঘোষণা করবার হুশিয়ারি দিয়েও নবান্নে তৃণমূল নেত্রীর সাথে টিফিন সেরে মাত্র একটি আসন তাও সরাসরি তৃণমূলের হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তাতে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যত ওখানেই ‘শেষের শুরু’ হয়।এতে জমিয়ত উলেমা হিন্দের অন্দরে বিরোধ তৈরি হয়।এরপর কলকাতার টিপু সুলতান মসজিদের একদা ইমাম বরকতির গাড়িতে লালবাতি লাগানো নিয়ে মসজিদের সামনে হুংকার ছেড়েছিলেন। তাতে মুসলিম বলয়ে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর প্রভাব অনেকখানি কমে যায়।মঙ্গলকোটে যেভাবে শাসক দলের বড় অংশের কাছে জুতো / কালো পতাকা দেখেও মন্ত্রীত্ব ছাড়েননি তিনি।তাতে তৃণমূলী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর ইমেজ বাম জমানার লড়াকু সিদ্দিকুল্লাহ কে ফিকে করে দেয়।সেই জায়গায় ফুরফুরা শরীফের আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজান কড়া প্রতিবাদী ইমেজ কে সামনে রেখে মাস খানেকের মধ্যেই সর্বভারতীয় দলগুলির কাছে চল্লিশ টি আসন নিজেদের গড়া সেকুলার ফ্রন্টে লড়াই করবার অধিকার ছিনিয়ে নেন। রাজনৈতিক কারবারিদের মতে, যেভাবে মুসলিম – আদিবাসী – দলিত হিন্দুদের ৮০% ভোট কে টার্গেট করেছেন ভাইজান। তাতে একুশে বিধানসভা নির্বাচনে তৃনমূল – বিজেপির মধ্যে বড় দুশ্চিন্তা হয়ে উঠছেন ভাইজান। তাই একথা বলায় যায় রাজনৈতিকগত দিক দিয়ে – সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী ‘আব্বাস ভাইজান’ হতে পারলেন না