স্বামীদের ছাড়লেন দুই গৃহবধূ
নতুন করে ঘর বাঁধলেন দুই সমকামী
খায়রুল আনাম
মায়ার ফাঁদ পাতা আছে এই ভূবণ জুড়ে। প্রবাদ বাক্যে আছে : পীড়িতে মজিল মন, কী বা হাড়ি, কী বা ডোম। এখানে অবশ্য ভূবণ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা নারী-পুরুষের সম্পর্কে জাতি-বর্ণভেদের বাধা না মানারই শব্দ উচ্চারিত হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার ১৬ সেপ্টেম্বর বীরভূমের দুবরাজপুর শিব মন্দিরে বহু সংখ্যক মানুষ প্রত্যক্ষ করলেন দুই বিবাহ বিচ্ছিন্না মহিলার বিবাহ। নিজেদের ভালোবাসার সম্পর্ককে স্থায়ী রূপ দিতে নমিতা দাস ও সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায় আবদ্ধ হলেন বিবাহ বন্ধনে। এদিন অবশ্য মালদহের ইংলিশবাজারের ৩১ বছরের মেয়ে নমিতা দাস বীরভূমের খয়রাশোলের ২৮ বছরের মেয়ে সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের সিঁথিতে সিঁদুর পরিয়ে দেন। কয়েক বছর আগে নমিতা দাসের সঙ্গে তাঁর স্বামীর বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে। তাঁর চার বছরের পুত্র সন্তান এখন তাঁর কাছেই রয়েছে। অপর দিকে সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়েরও আট বছরের মেয়ে রয়েছে। মেয়ে রয়েছে তাঁর বাবার কাছে। সুস্মিতা চট্টোপাধ্যায়ের বাবার বাড়ির লোকজন এই সমকামী বিয়ে মেনে নেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে, এদিন দুবরাজপুর শিব মন্দিরে এরা সিঁদুর দান করে বিয়ে করার পরে, তাকে আইনী স্বীকৃতি দিতে দুবরাজপুর আদালতেও এই বিয়ে নথিভুক্ত করেছেন। নমিতা দাসের বাড়িতে অবশ্য বাবা-মা কেউ নেই। তাঁর কলকাতায় বাড়ি রয়েছে এবং তিনি সেখানে প্রতিষ্ঠিত। সুস্মিতার বাড়ির লোকজন মেয়ের এই সমকামী বিবাহ মেনে নেওয়ায়, তাঁরা কিছুদিন খয়রাশোলে থেকে কলকাতায় গিয়ে গুছিয়ে সংসার করবেন বলে জানিয়েছেন। নমিতার চার বছরের সন্তান তাঁদের কাছেই থাকবে। তাঁরা উভয়েই তাকে মানুষ করবেন বলে জানিয়েছেন।
অসম এই বিয়ের সূত্রপাত হয় কয়েক বছর আগে ইনস্টাগ্রামে তাঁদের পরিচয়ের মধ্যে দিয়ে। সেই পরিচয় এতটাই গভীর হয় যে, এক সময় নমিতা ও সুস্মিতা পারস্পরিক সেই পরিচয়কে আর দূর সঞ্চারে সীমাবদ্ধ না রেখে প্রবল আকর্ষণে পরস্পরে দেখাশোনা থেকে শুরু করে নানাভাবে মিলিত হতে শুরু করেন। তখনই তাঁরা উপলব্ধি করেন যে, তাঁরা উভয়েই স্বামীর সঙ্গে দাম্পত্য জীবন অতিবাহিত করে সন্তানের জন্ম দিলেও, নারী জীবনের পূর্ণ স্বাদ ও পূর্ণতা পাননি। কিন্তু অসম সম্পর্কে তাঁরা তা পেয়েছেন এবং বাকী জীবনটা তাঁরা সেই পূর্ণতার স্বাদ নিয়েই থাকতে চান বলে জানিয়েছেন।