আবৃত্তির পাঠশালার বসন্ত উৎসব মেমারিতে
সেখ সামসুদ্দিন
বাঙালির রোমান্টিসিজমের আর জনপ্রিয় ক্ষেত্র হলো আবৃত্তি। রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, সুকান্ত, জীবনানন্দের বাংলায় প্রতিটি বাঙালির মধ্যে লুকিয়ে আছে সুপ্ত কবি প্রতিভা। যেকোনো সময় দু’লাইনের কবিতা মুখে মুখে সে বানিয়ে দিতে পারে। একটা সময় যেকোনো উৎসবের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল কবিতা- আবৃত্তির আসর। যতই আমরা ডিজিটাল যুগের হাত ধরে মোবাইল কালচারে মেতে উঠিনা কেন আজও কবিতা আমাদের টানে। বাঙালির ভোজের শেষ পাতে দই-মিষ্টির মত আজও কবিতা সমানে তার আকর্ষণ ধরে রেখেছে। দোলের মত রঙিন উৎসবের প্রাক্কালে বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী ব্রততী ঘোষ আলি ও তার আবৃত্তির পাঠশালার উদ্যোগে ‘ফাগ ছোঁয়া পলাশে’-এর মাধ্যমে এক অন্য বসন্ত উপহার দিল মেমারিবাসীকে।
ঋতুরাজের আগমনে ফাগুনের রোদেলা আবৃত্তির পাঠশালার কচিকাঁচাদের শব্দজাদুতে ও সাংস্কৃতিক মনস্ক হৃদয়ের অনুভূতিতে কথা, আবৃত্তি, সঙ্গীত ও নৃত্যের সুমধুর সুর ও মিষ্টি কলতানে মুখরিত হলো পূর্ব বর্ধমান জেলার মেমারির সোমেশ্বরতলার আটচালা। সঙ্গে ছিলেন বিশিষ্ট কবি উজ্জ্বল দাস, বিশিষ্ট গল্পকার শুভাশিস মল্লিক, বিশিষ্ট সংস্কৃতি প্রেমী সেখ মোয়াজ্জেম।
বৈশ্বিক উষ্ণায়ন হ্রাসের লক্ষ্য নিয়ে উপস্থিত সম্মানীয় অতিথিদের চারাগাজ প্রদান ও আবিরের টিকা দিয়ে অতিথিবরণের পর একটি চারাগছে জল সিঞ্চনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক কবি অশোক মুথোপাধ্যায়। এছা়ড়াও মঞ্চে আলোকিত করেছিলেন বিশিষ্ট চিকিৎসক-সাহিত্যিক ডাঃ অভয় সামন্ত, মেমারিতে বাংলা ব্যান্ড এর প্রতিষ্ঠাতা প্রাণপুরুষ সুমন চ্যাটার্জী। আবৃত্তি পাঠশালার ক্ষুদে শিল্পী শ্রেষ্ঠা চক্রবর্তীর উদ্বোধনী আবৃ্ত্তির মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়।
আবৃত্তি পাঠশালার প্রধান শিক্ষিকা ও বাচিক শিল্পী ব্রততী ঘোষ আলির সঞ্চালনায় আবৃত্তি পরিবেশন করেন ক্ষুদে শিল্পী আরাধ্যা মজুমদার, সুপ্রীতি বসু, আরাধ্যা মুখার্জী, অদৃজা দত্ত, ধৃতিমান লাহা, সৃঞ্জিনী হাঁড়া, অভিরুপ ঘোষ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী সুরঞ্জিত দত্ত, পায়েল শেঠ, দীপ্তাশ্রী গাঙ্গুলি। মেমারি শহরের বিশিষ্ট নৃত্যশিল্পী সৈকত চোঙদারের প্রতিষ্ঠান আনন্দধারার ক্ষুদে শিল্পী আয়ুর্ধা ব্যানার্জী, আদৃতা পালোয়ান, অদ্রিকা হালদার, মেঘনা মিত্র, চন্দ্রিমা বিষয়ী, পুষ্পিতা মাঝি, সারনী লাহা, সৃজিতা নন্দী, বিদ্দিয়া শর্মা, রশ্মি দাস, সৈরেন্দ্রী সরকারে পায়ের ছন্দে মুখরিত হয় সোমেশ্বর তলার আটচালা। এছাড়াও কবিতা পাঠ করেন কবি তন্দ্রা বসু, কবি সুদেষ্ণা ব্যানার্জী, কবিসুফি রফিক উল ইসলাম, কবি কমলেশ মন্ডল সহ অন্যান্যরা। অতিথিরা ছাড়াও বক্তব্য রাখেন পার্থসখা অধিকারী।
বিশেষ অতিথি ও ফাগ ছোঁয়া পলাশের উদ্বোধক কবি অশোক মুথোপাধ্যায় বলেন, বাংলা ভাষা আমাদের গর্ব বর্তমানে বাংলা স্কুলগুলো বন্ধ হওয়ার মুখে। বাংলার ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে যার প্রভাব ভবিষ্যতে দেখা দিতে বাধ্য। তাই বসন্ত উৎসবে বাঙালির সংস্কৃতির ঐতিহ্য ধরে রাখতে হবে।
আবৃত্তির পাঠশালার কর্ণধার ব্রততী ঘোষ আলি জানান, দীর্ঘদিন ধরেই আবৃত্তি জগতের সঙ্গে যুক্ত। তবে আমার প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই প্রথমবার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। আগামী প্রজন্মের মধ্যে সুস্থ সংস্কৃতির চেতনার উন্মেষ ঘটনোর জন্যই এই অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা।
(সংবাদটি আপনার বহুল প্রচারিত সংবাদপত্র, ওয়েব পোর্টাল, ভিডিও চ্যানেলে প্রকাশ করার অনুরোধ জানাই)
ব্রততী ঘোষ আলি (যোগাযোগ – 7878037535)