আলু বীজের দাম কিরুপ হবে? সংশয়ে চাষিরা

Spread the love

 আলু বীজের দাম কী থাকবে

 চাষিদের নাগালের মধ্যে ? 

          খায়রুল আনাম ( বিপাশা আর্ট প্রেস)

এবার বর্ষা ভালো হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে অন্যান্য জায়গার সাথে জেলা বীরভূমেও  জেলার প্রধান ফসল ধান চাষও সম্পন্ন হয়েছে একশো শতাংশ জমিতে। বিগত কয়েক বছর ধরে এই চিত্র দেখা যায়নি জেলায়।  জেলার কিছু  জায়গায়   আঞ্চলিকভাবে জলস্ফীতির ফলে  অল্পবিস্তর কিছু সমস্যা সৃষ্টি হলেও, জেলায় সেই অর্থে কোথাও  এবার বন্যা পরিস্থিতিও দেখা দেয়নি। তাই, জেলা কৃষি দফতরও আশা  করছে যে, এবার জেলা আমন মরশুমে ধান উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।

       কিন্তু আমন ধানের পরেই  পরবর্তী চাষ হিসেবে জেলায় প্রাধান্য পেয়ে থাকে আলু চাষ। জেলার কয়েকটি জায়গায় বেশি পরিমাণে আলু চাষ হলেও, জেলার প্রতিটি প্রান্তেই রবি মরশুমে আলু চাষ হয়ে থাকে। তারপরে রয়েছে সরষে চাষ। জেলায় ধানের পরেই দ্বিতীয় প্রধান ফসল হিসেবে ইতিমধ্যেই আলু চাষের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। পুজোর পরেই  যাতে আলু চাষ  করা যায় তারই প্রস্তুতিতে ব্যস্ত আলু চাষিরা। কিন্তু  বিগত বছরের  নভেম্বর মাস থেকে খোলা  বাজারে আলুর যে ভাবে মূল্যবৃদ্ধি ঘটে চলেছে তাতে, সেই আনুপাতিক হারে আলু বীজেরও মূল্যবৃদ্ধি ঘটবে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। আর তারফলে আলু চাষিরা যে চরম সঙ্কটে পড়বেন, সেটাও মনে করা হচ্ছে। আলু চাষিরা বলছেন, বিগত নভেম্বর থেকে তাঁরা যে ভাবে  আলুর দাম পেয়ে চলেছেন তা তাঁদের কাছেও অবিশ্বাস্য বলে মনে হচ্ছে।  আলু বিক্রি করে তাঁরা যথেষ্ট লাভবান হচ্ছেন।   আর  এখান থেকেই তাঁদের মধ্যে আগামীতে আলু চাষ করার জন্য  আলু  বীজের মূল্য কতটা বৃদ্ধি পাবে, তা নিয়েই তাঁরা উদ্বিগ্ন রয়েছেন।

            এরাজ্য এখনও পর্যন্ত আলুবীজ উৎপাদনে স্বাবলম্বী হতে  না পারার কারণে  পাঞ্জাব ও হরিয়ানা  থেকে আমদানিকৃত আলুবীজের উপরে নির্ভর করতে হয়। এরাজ্যের যে সব আলুবীজ ব্যবসায়ীরা তাঁদের সঙ্গে সমন্বয় রেখে ব্যবসা করেন তাঁরা অন্যান্য বছর  মার্চ মাস থেকেই আলুবীজের বায়না শুরু করে দেন। কিন্তু এবার অন্যান্য বছরের চেয়ে আলুর দাম বেশি থাকায়, আলুবীজে অধিক মুনাফার আশায় বা লোভে মার্চ মাস থেকে আলুবীজের কোনও অগ্রিম বায়না বা বুকিং নেওয়া হয়নি। আলুবীজের মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কাটা  তৈরী হচ্ছে সেখান থেকেই। বাজারে আলুবীজ এবং খাবার আলু উভয়ই বিক্রি হয়ে থাকে ৫০ কেজি-র বস্তা হিসেবে। গত বছর রাজ্যে খাবার  জ্যোতি আলু  যেখানে বিক্রি হয়েছে প্রতি বস্তা  ৩৫০ টাকা হিসেবে সেখানে ওই আলুবীজই বিক্রি হয়েছে বস্তাপিছু ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বস্তা হিসেবে। বর্তমান বছরে এই সময় খাবার জ্যোতি আলুই যেখানে  গত বছরের চেয়ে চারগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ টাকা  থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা বস্তা হিসেবে সেখানে,  এবার খাবার আলুর সাথে সাজুয্য রেখে বীজ আলুর দামও  বাড়বে বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে। অক্টোবর মাসের শেষ থেকে নভেম্বর মাসের প্রথম দিকেই  রাজ্যে  আলুবীজ বপনের  কাজ  শুরু হয়ে যাবে।  প্রতি বিঘা জমিতে সাধারণত ৪ বস্তা আলুবীজের প্রয়োজন হয়।  বিঘা প্রতি ৮৫ থেকে ৯০ বস্তা আলু উৎপন্ন হয়ে থাকে। জমিতে আলু উৎপাদনের জন্য চাষের খরচ,  বীজ আলু, রাসায়নিক সার, কীটনাশক, সেচ, শ্রমিকের মজুরি-সহ অন্যান্য খরচ রয়েছে। সেইসব বাদ দিয়ে আলুচাষির লভ্যাংশ কতোটা  থাকবে, সেটাই বিচার্য।  আবার প্রাকৃতিক বিপর্যয়জনিত পরিস্থিতিতে জমিতেই আলু নষ্ট  হয়ে যাওয়ার মতো বিষয়টি রয়েছে। যেখানে আলু চাষির আত্মঘাতী হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটে থাকে প্রায় প্রতি বছরই।  তাই আলুচাষ প্রায় প্রতি বছরই ঝুঁঁকিপূর্ণ হয়ে থাকে। আর সে জন্যই  গ্রামবাংলায় বলা হয়ে থাকে যে, আশায় বাঁচে চাষা। সেই আশায় ভর করেই এবারও যে আলুচাষ বাড়বে তা প্রায় সুনিশ্চিত। আর তারই পরিপ্রেক্ষিতে আলু বীজের দাম বাড়ার আশঙ্কাও করা হচ্ছে। রাজ্যে আলু বীজের দাম নিয়ে ফাটকাবাজি হলেও, সেই অর্থে সরকারিভাবে  বীজ আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে তেমন কোনও ব্যবস্থাই থাকে না। চাষিদের যাতে অধিক দামে বীজ আলু কিনতে না হয়, সে জন্য সরকারিভাবে ফাটকাবাজি রুখতে ‘টাস্কফোর্স’ গঠন, বাজারে নানা মাপের সরকারি আধিকারিক, মন্ত্রীদের  পরিদর্শনের কুনাট্য হলেও, তাতে কাজের কাজ তেমন একটা কিছু হয় না। আবার সরকারিভাবে কোথাও কোথাও আলু বীজ সরবরাহ করার কথা বলা হলেও, তা সময়েও পৌঁছয় না। আবার যে বীজ আলু আসে, তার গুণগত মান নিয়ে এতো প্রশ্ন আর সংশয় থাকে যে, তার উপরে চাষিরা  খুব একটা ভরসা রাখতেই পারেন না। আর তাই পচনশীল ফসল হিসেবে আলুচাষে নিশ্চয়তার চেয়ে অনিশ্চয়তার পাল্লাই বেশি ভারী থেকে যাচ্ছে ।। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *