করোনা আবহে গঙ্গাসাগরে ই স্নান চায় হাইকোর্ট

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,


আজ থেকে শুরু হচ্ছে দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগর দ্বীপে গঙ্গাসাগর মেলা।তবে মকরসংক্রান্তির স্নান এখনও দেরি বেশ কয়েক দিন।তার আগেই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে এক মামলায় ই স্নানে সওয়াল করতে দেখা গেলো খোদ কলকাতা হাইকোর্ট কে।কেননা করোনা আবহে সার্বিক জনস্বার্থে কলকাতা হাইকোর্টের এহেন অবস্থান। শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে রাজ্য – কেন্দ্র ও মামলাকারীর আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব চলে। সেখানে স্বাস্থ্য সচিবের রিপোর্ট দেখে সন্তুষ্ট হাইকোর্ট। তবে আগামী ১৩ জানুয়ারি মুখ্যসচিবের রিপোর্ট দেখেই গঙ্গাসাগরে মকরস্নান নিয়ে চুড়ান্ত নির্দেশ দেবে হাইকোর্ট। এদিন ‘ই স্নানে’র উপর জোর দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। ‘ই স্নান’ টা আসলে কি?  হাইকোর্ট এদিন আদেশনামায় উল্লেখ করেছে যে – ‘ অনলাইনের মাধ্যমে বুকিং করতে হবে দর্শনার্থীদের কে।এরপর বুকিং গ্রাহকদের বাড়ি বাড়িতে পৌঁছে যাবে গঙ্গাসাগরের পবিত্র জল।এছাড়াও গঙ্গাসাগরের বিভিন্ন কিয়স্কে পাওয়া যাবে এই পবিত্র জল ‘। মোদ্দাকথা, গঙ্গাসাগরে লাখো লাখো ধর্মপ্রাণদের একসাথে স্নান করা যাবেনা।রাজ্য সরকার কে ‘ই স্নান’ নিয়ে শনিবার থেকেই প্রচারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, গতবছর রাজ্য সরকারের তরফে গঙ্গাসাগর মেলা নিয়ে এক বিশেষ প্যাকেজ চালু করেছিল।সেখানে পুজোর বিভিন্ন সামগ্রীর পাশাপাশি গঙ্গাসাগরের জলও পেতেন আগ্রহীরা।এ বছর ভার্চুয়াল মকরসংক্রান্তির সাক্ষী থাকতে আগ্রহীদের গুগলের লিংক পাঠানোর কথাও বলেছে কলকাতা হাইকোর্ট। পুরী সহ বিভিন্ন জায়গায় আগেথেকেই দর্শনার্থীদের করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট বাধ্যতামূলক ছিল।যেটা এবছর গঙ্গাসাগরে করা হয়নি।সবরীমালা স্নান নিষিদ্ধ করা হয়েছিল মারণ ভাইরাস করোনা রুখতে।এমনকি মন্দির মসজিদ গির্জার মত ধর্মীয়স্থান গুলিতেও একসময় বন্ধ রাখা হয়েছিল করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ এড়াতে। এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণন এই মামলার শুনানিতে হাইকোর্ট কে মন্দির এবং স্যানিটাইজার কে চরণামৃত বলে অভিহিত করেন। গত শুনানিতে   কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিলেন -‘ মানুষের জীবন আগে, ধর্মীয় বিশ্বাস তারপর। ধর্মের থেকে জীবনের অধিকার আগে’। ওইদিন আদালত আসার পথে প্রধান বিচারপতি কলকাতা হাইকোর্ট ঢুকবার আগে বাবুঘাটে মাস্কবিহীন গঙ্গাসাগর মেলা যাওয়ার দর্শনার্থীদের দেখে চিন্তিত হন।তাই তিনি ওইদিন রাজ্যের এডভোকেট জেনারেল কে  মুখ্যসচিবের হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন করোনা সংক্রমণ এড়াতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে রিপোর্ট টি জমা দিতে বলা হয়েছিল। সরকারি তথ্য অনুযায়ী গতবছর ২৫ লক্ষ দর্শনার্থীরা এসেছিলেন গঙ্গাসাগর মেলায়। গঙ্গাসাগর মেলার সাথে কুম্ভমেলার তুলনা করা যায়।তবে দুর্গাপুজো – ছটপুজো – জগদ্ধাত্রী পুজোর তুলনা টানা যায়না বলে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ ওইদিনকার মামলায় শুনানিতে পর্যবেক্ষণে উল্লেখ করেছিল।এত বিপুল মানুষ স্নান করলে মুখ ও নাকের নিঃসৃত ড্রপলেটের মাধ্যমে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়বে।যারা গঙ্গাসাগরে যাবেন তাদের তো বটেই তাদের সাথে পরবর্তীতে যারা সংস্পর্শে আসবেন তারাও করোনা পজিটিভ হতে পারেন।তাই ওইদিন প্রধান বিচারপতি রাজ্য কে গঙ্গাসাগর মেলার মকরসংক্রান্তির স্নান কে প্রতীকী করবার পরামর্শও দিয়েছে সার্বিক জনস্বাস্থ্য এর কথা ভেবে। গঙ্গাসাগরের পবিিত্র জল যাতে দর্শনার্থীরা সরকারি সহযোগিতায় বাড়ি নিয়ে যেতে পারে, সেই বিকল্প ভাবনাও রাজ্য গ্রহণ করতে পারে।কলকাতা হাইকোর্ট গঙ্গাসাগর মেলার দর্শনার্থীদের ভীড় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চিন্তিত নয়, চিন্তিত করোনা আবহে একসাথে লক্ষ লক্ষ দর্শনার্থীদের মকরস্নান ঘিরে।কেননা করোনা ভাইরাস টি দ্রুত সংক্রমিত হয়ে যায় মানুষের মধ্যে।এই মামলার আইনজীবী সব্যসাচী চট্টপাধ্যায় জানিয়েছেন – ‘ রাজ্য সরকার ১৯৭৬ সালের গঙ্গাসাগর মেল নিয়ে বিশেষ আইনে সার্বিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবে বন্ধও করে দিতে পারে ‘।শুক্রবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিবের রিপোর্ট দেখে সন্তুষ্ট হলেও মুখ্যসচিবের রিপোর্ট টি ১৩ জানুয়ারির মধ্যে দাখিলের নির্দেশ দেয়। আজ অর্থাৎ শনিবার থেকেই ই স্নান নিয়ে রাজ্য সরকার কে প্রচারের নির্দেশ দিয়েছে। অনলাইনে বুক করে দর্শনার্থীরা ই স্নানের পবিত্র জল পাবেন।পাশাপাশি গঙ্গাসাগরে বিভিন্ন কিয়স্ক থেকে মিলবে গঙ্গাসাগরের পবিত্র জল।মকরসংক্রান্তিতে সাক্ষী থাকতে ভার্চুয়াল লিংক পাঠানোর পরিকাঠামো করে দিতে হবে রাজ্য সরকার কে। ১৩ই জানুয়ারি মকরসংক্রান্তির স্নান নিয়ে চুড়ান্ত নির্দেশ দেওয়া হবে মুখ্যসচিবের রিপোর্ট দেখে। ওইদিন এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *