করোনা আবহে স্কুল কলেজ বন্ধ, সেখানে পুজোর অনুমতি কিসের ভিক্তিতে? জানতে চায় হাইকোর্ট

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু ),


‘পুলিশ যদি সব কাজ  করে , তাহলে  ক্লাব কে কেন অনুদান? ‘ শুধু তাই  নয় – ‘করোনা আবহে ক্লাব কে টাকা দেওয়ার যুক্তি কি?  এর মধ্যে রাজনৈতিক  উদ্দেশ্য  নেই তো! গনতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় ধর্মের নামে  ভেদাভেদ  গড়া যায়?  অনুদান  কি শুধুমাত্র  দুর্গাপূজায় দিয়ে থাকে সরকার?  নাকি অন্য উৎসবেও দেয়?  ইদেও কি একই অনুদান দেওয়া হয়েছিল?  করোনা ভাইরাসের  সংক্রমণ  এড়াতে  যেখানে  শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি বন্ধ, সেখানে পুজোর অনুমতি  কিভাবে দেওয়া হচ্ছে?  এইবিধ নানান প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হয় রাজ্য সরকার। কলকাতা  হাইকোর্টের  বিচারপতি  সঞ্জীব  বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে বৃহস্পতিবার  দুপুরে  পুজোয় সরকারি  অনুদান  মামলায় এই ধরনের প্রশ্ন উঠে রাজ্য সরকারের  আইনজীবীর কাছে। পঞ্চাশ হাজার টাকার  অনুদান  প্রসঙ্গে  রাজ্য  সরকারের  আইনজীবী  করোনা রোধে মাস্ক – স্যানিটাইজার কেনার অনুদান  বোঝাতে গেলে হাইকোর্ট জানায় – ‘ রাজ্য সরকার  তো নিজেই কেন্দ্রীয় ভাবে কিনে বিলি করতে পারতো, তাহলে খরচ অনেক কমত’। আসন্ন দুর্গাপূজায় মন্ডপের ভেতর থেকে বাইরে পর্যন্ত  সবেতেই  পুলিশ প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে রাজ্য জানালে, তখন হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়  – ‘ পুলিশ যদি সব কাজ করে থাকে , তাহলে ক্লাব কে  কেন  সরকারি  অনুদান’? এই বিধ নানান প্রশ্নের উত্তর  শুক্রবারের মধ্যে রাজ্য কে জানাতে বলেছে কলকাতা  হাইকোর্টের  বিচারপতি  সঞ্জীব  বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন  বেঞ্চ । একাধারে দুর্গাপূজায় একলাফে পঞ্চাশ হাজারের আর্থিক  অনুদান  পাশাপাশি  পুরোহিতদের ভাতা প্রদানে ভারতীয় সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতায় প্রশ্নচিহ্ন  দাবি করে কলকাতা  হাইকোর্টে দুটি জনস্বার্থ  মামলা দায়ের করেন  দুর্গাপুরের  সিটু  নেতা  সৌরভ  দত্ত । আজ ছিল তার  শুনানি। উল্লেখ্য , করোনা আবহে আসন্ন শারদীয়া এবার বর্ণহীন বলা যায়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আসন্ন দুর্গাপূজার  জন্য একগুচ্ছ সরকারি  ছাড় ঘোষণা  করেছেন। যেমন পুজো  কমিটি গুলি ৫০ হাজারের সরকারি  অনুদান পাবে। দমকল এবং প্রশাসনে জমা করতে হবেনা কোন অর্থ। পাশাপাশি  পুজো কমিটির বিদ্যুৎ বিলে মিলবে ৫০% ছাড়। এও ছাড়া পুরোহিতদের জন্য ভাতা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন  মুখ্যমন্ত্রী । ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – আসন্ন একুশে বিধানসভা নির্বাচনে এটি চমক রাজ্য সরকারের। রাজনীতিতে তর্কবিতর্ক  যতই থাকুক তবে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে কলকাতা  হাইকোর্টে দুটি  মামলা রুজু  হয়েছে । মামলাকারী  হলেন পশ্চিম বর্ধমান  জেলার দুরগাপুরের সিটু নেতা সৌরভ দত্ত। যদিও পুজো  কমিটির  সরকারি  অনুদান  মঞ্জুর  নিয়ে এর আগেও মামলা দাখিল  হয়েছে। সেই মামলা সুপ্রিম  কোর্টে এখনও  বিচারধীন। চুড়ান্ত রায়  এখনো দেয়নি দেশের শীর্ষ  আদালত । আগামী বুধবার  সেই মামলার সুপ্রিম নির্দেশনার কপি জমা পড়বে কলকাতা  হাইকোর্টের  বিচারপতি  সঞ্জীব  বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন  বেঞ্চে । । গত ২০১৮ সালে রাজ্য সরকার  দুর্গাপূজা কমিটি গুলি কে উৎসাহ  এবং সাহায্য  করার জন্য ১০ হাজার টাকার অনুদান  দেয়। এই অনুদানের পরিমাণ  দ্বিগুণের বেশি (২৫ হাজার) হয় গত বছর । চলতি  বছর আবার তার দ্বিগুন (৫০ হাজার)  হয়। অর্থাৎ  গত দুবছর  আগেকার দশহাজার টাকার অনুদান পাঁচগুনে পঞ্চাশ হাজারে দাঁড়ায় এবছর। পাশাপাশি  এবছর  ইমাম মোয়াজ্জেনদের মত পুরোহিতদের জন্যও ভাতা দেওয়ার কথা ঘোষণা  করে  রাজ্য সরকার। গত ২০১৮ সালে এই দুর্গাপূজার  কমিটি গুলি কে সরকারি  অনুদান  মঞ্জুর  করা নিয়ে কলকাতা  হাইকোর্টে মামলা  দাখিল  হয়েছিল। এই মামলা যায় দেশের সর্বোচ্চ  আদালতেও। যা আজও  বিচারধীন রয়েছে । রাজ্য সরকার  সুপ্রিম  কোর্টে  জানিয়েছিল – ট্রাফিক  পুলিশের তরফে ‘সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ’ কর্মসূচি  পালনে এই অর্থ মঞ্জুর  করা  হয়েছে। সেই মামলায়  সুপ্রিম  কোর্ট  স্থগিতাদেশ জারী করে থাকে। পাশাপাশি  রাজ্য এবং কলকাতা  পুলিশ কে এই অনুদান দেওয়ার কথা বলে। ঠিক এইরকম  পরিস্থিতিতে  সংবিধানের  ধর্মনিরপেক্ষতায় প্রশ্ন তুলে দুটি  জনস্বার্থ  মামলা দায়ের করেন দুর্গাপুরের সিটু নেতা  সৌরভ  দত্ত । একাধারে পুজো কমিটির সরকারি অনুদান এবং অন্যদিকে পুরোহিত ভাতা বিষয়ক মামলা। এই মামলায় আজ কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চে একপ্রকার চরম ভৎসনার মুখে পড়লো রাজ্য। শুক্রবারের মধ্যে ডিভিশন বেঞ্চের প্রশ্নগুলির যথাযথ উত্তর রাজ্য কে দিতে বলা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *