মোল্লা জসিমউদ্দিন,
একসময় কলকাতা – হাওড়া এলাকায় স্টোনম্যানের চাপা আতঙ্কে থাকতো শহরবাসী। ঠিক এইরুপ আরেক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল পূর্ব বর্ধমান এবং হুগলির সীমান্তবর্তী এলাকায়। বছর দুই – তিন আগে পূর্ব বর্ধমানের কালনা মহকুমা এলাকায় একের পর এক ঘটে চলত চেন কিলারের হাতে মহিলা খুনের দৌরাত্ম। তটস্থ এলাকায় ভর্তি দুপুর কিংবা সন্ধেবেলায় চেন কিলারের চোরা সন্ত্রাস তখন বিভীষিকা কালনা মহকুমাবাসিদের কাছে। মন্তেশ্বর – কালনা – পূর্বস্থলী কিংবা হুগলির বলাগড় সিরিয়াল চেন কিলারের ঘটনা দুই জেলার পুলিশ কে নাজেহাল করে ফেলতো৷ গত বছরের ২২ জুলাই কালনার কাকুড়িয়া রাস্তায় এক স্যুটপ্যান্ট পরিহিত নিপাট ভদ্রলোকের সন্ধান মিললো! তাও লাল টুকটুকে এক মোটরসাইকেলের চালক হিসাবে। ওই মোটরসাইকেলে রাখা লোহার চেনই সব পর্দাফাঁস করে দিল ঘাতকের কুকীর্তির। পুলিশি জেরায় ১৩ টি ফৌজদারি মামলায় মূল অভিযুক্ত কামরুজাম্মান সরকার একের পর এক মহিলা কে খুন করে ধর্ষণের ঘটনা তুলে ধরলো। যা শুনে জেলাপুলিশের দুঁদেকর্তারাও হতবাক। বাড়ীতে থাকা একাকী মহিলাদের টার্গেট করতো চেন কিলার। কখনো বিদ্যুতের মিটার দেখার নামে আবার কখনো বা স্বাস্থ্যকর্মী পরিচয়ে নিসঙ্গ থাকা মহিলাদের বাড়িতে ঢুকতো। প্রথমে লোহার চেনে গলা পেঁচিয়ে খুন। এরপর বিকৃত কাম লালসায় ধর্ষণ করতো ফাঁসির সাজা প্রাপ্ত এই চেন কিলার। গত বছর ২২ জুলাই ধরা পড়ার পর ওই বছর ২৫ আগস্ট পুলিশ চার্জশিট দাখিল করে থাকে।৩০২, ৩৭৬, ৪৪৮ ধারা সহ পস্কোর ৬ নং ধারায় চার্জশিট দাখিল হয়। ৩৫ জনের সাক্ষ্যদান ঘটে এই মামলায়। ৬৫ টির বেশি খুনের সাথে যুক্ত সামগ্রী বাজেয়াপ্ত ঘটে। চলতি বছরের ২ জুলাই কালনা মহকুমা আদালতে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তপন কুমার মন্ডলের এজলাসে এই চেন কিলার কে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। সোমবার দুপুরে সিরিয়াল চেন কিলারের ফাঁসির নির্দেশ দেন বিচারক তপন কুমার মন্ডল। কালনা মহকুমা আদালত সুত্রে প্রকাশ, ৪৪৮ নং ধারায় ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, ৩৭৬ নং ধারায় সশ্রম যাবৎজীবন, ৩০২ নং ধারায় ফাঁসি এবং পস্কোর ৬ নং ধারায় সশ্রম যাবৎজীবন সাজা দিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক তপন কুমার মন্ডল। এই মামলাটি সম্পর্কে জানা যায়, গত বছরের ৩০ মে কালনার সিঙ্গেরকোনে এক দশম শ্রেণির ছাত্রীকে একা পেয়ে চেন দিয়ে মারধর এবং ধর্ষণ করে থাকে চেন কিলার। গুরতর আহত অবস্থায় কালনা মহকুমা হাসপাতাল থেকে বর্ধমান সদর হাসপাতালে আনা হয় নির্যাতিতা কে। গত বছরের ১২ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ওই নাবালিকা। মৃত্যুর পূর্বে তদন্তকারীদের সামনে জবানবন্দি দিয়ে যায়। ওই জবানবন্দিতে সিরিয়াল চেন কিলারের সুনির্দিষ্ট তথ্য সহ স্কেচ প্রকাশ্যে আসে। জানা গেছে, ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত এই চেন কিলারের বিরুদ্ধে কালনা মহকুমা এলাকায় ৯ টি, মেমারি থানায় ২ টি এবং হুগলির বলাগড়ে ২ টি ফৌজদারি মামলায় ট্রায়াল চলছে। সোমবারে কালনা মহকুমা আদালতের ফাঁসির সাজাদানে খুশি নিহত নির্যাতিতার পরিবার।