মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
একুশে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থীপদ ঘিরে চরম অসন্তোষ গেরুয়া শিবিরের অন্দরে।ক্ষোভ বিক্ষোভের পাশাপাশি কেউ আত্মহত্যার হুমকিও দিচ্ছেন টিকিট না পেয়ে।কেন রাজ্য জুড়ে বিজেপির নিচুতলার কর্মীসমর্থকদের এহেন বিক্ষোভ প্রদর্শন! স্থানীয় থেকে জেলা সহ রাজ্যের গেরুয়া নেতারা নিজ নিজ পছন্দসই প্রার্থীর তালিকা পাঠিয়েছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে। এক একটি বিধানসভা আসনে গড়ে দশ থেকে পনেরো নাম পর্যন্ত গেছে।সেখানে চুড়ান্ত নাম ঠিক করতে হিমসিম খেতে হয়েছে দলের সর্বভারতীয় নেতাদের কে।তাই অমিত শাহ ( কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) তাঁর অধীনে থাকা আইবি দপ্তর কে নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছভাবমূর্তির নাম খুঁজে দেওয়ার নির্দেশ নাকি দিয়েছিল! যদিও আইবির তরফে প্রকাশ্যে এই রিপোর্ট জমা দেওয়ার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করা হয়নি।তবে পশ্চিম বাংলার দায়িত্বে থাকা আইবির এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে দুটি নাম পাঠানোর বিষয় টি নাম গোপন রাখার শর্তে স্বীকার করে নিয়েছেন। হেভিওয়েট বিধানসভার আসনে অবশ্য গড়ে তিনটি নাম পাঠানো হয়েছিল বলে দাবি।যাইহোক ধাপে ধাপে বিজেপি তাদের প্রার্থীপদ ঘোষণা ঘিরে চাপা অসন্তোষ ক্রমশ বেড়েছে ভোটের উত্তাপে।আশংকা, আসন্ন ভোটে দলীয় অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনা প্রবল রয়েছে। তাই দলের সাংসদদের সহ সর্বোচ্চ নেতাদের কে বাংলার ভোট ময়দানে নামানো হয়েছে দলের অন্তর্ঘাত রুখতে। বিজেপির সর্বভারতীয় নেতৃত্বের কাছে এক এবং একমাত্র টার্গেট বলা যায় – যেনতেন প্রকারে বাংলা দখল।গত লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকে ‘উনিশে হাফ, একুশে সাফ’ স্লোগানের আবির্ভাব ঘটে বাংলায়।উনিশে লোকসভা নির্বাচনে ১৮ টি আসন জিতে যাওয়ায় একুশে বিধানসভা ভোটের বিজেপির পারদ তুঙ্গে। দুশোর বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতা দখল শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা বলে বিজেপির প্রচার চলছে মধ্যগগনে। একাধারে সিবিআই – ইডি – কেন্দ্রীয় বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতা এই বাংলা কে ঘিরে যেমন দেখা যাচ্ছে। ঠিক তেমনি আবার তৃণমূলের নেতানেত্রীদের চাপে ফেলে কিংবা প্রলোভন দেখিয়ে দলবদল করানোটা বিজেপির কালচারে পরিণত হয়েছে বলে শাসক দলের দাবি। ঘটনা যাইহোক, ২০১৭ সালে বাংলার রাজনীতিতে চাণক্য নামে পরিচিত মুকুল রায় তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ায়, বাংলা দখলের স্বপ্নে বাস্তবতা কিছুটা আসে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বিজেপির সর্বভারতীয় সহ সভাপতি পদে মুকুল রায় আসাতে তাঁর তৃণমূলের পুরাতন অনুগামীদের দলবদলের বিশ্বাসযোগ্যতা বহুগুণ বেড়ে যায় বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । অপরদিকে এতে বিজেপির প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহার রাজনৈতিক প্রভাবে ভালোমতন ভাঁটা পড়ে যায়। বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ দলবদলকারী তৃনমূল নেতাদের অন্তরে মেনে না নিলেও তৃনমূল ত্যাগ করা নেতাদের মঞ্চে বাহ্যিক বন্ধুত্ব দেখাতে হয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের চাপে পড়ে বলে মনে করেন অনেকেই। একদা রাজ্যের পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী তৃনমূল ছেড়ে বিজেপিতে আসায় চতুর্মুখি অনুগামী মহল গড়ে উঠেছে বাংলার গেরুয়া শিবিরে বলে কেউ কেউ মনে করেন। আসানসোলের সাংসদ বাবুল সুপ্রিয়র দু চোখের বিষ ছিলেন তৎকালীন আসানসোল পুরসভার মেয়র তথা পশ্চিম বর্ধমান জেলার তৎকালীন তৃণমূল সভাপতি জিতেন্দ্রনাথ তেওয়ারি। সেই জিতেন্দ্র তেওয়ারি বর্তমানে বাবুল সুপ্রিয়র পাশে মঞ্চ আলোকিত করছেন বিজেপির হয়ে! এমনকি পান্ডবেশ্বরে বিজেপির প্রার্থীপদ পেয়েছেন খুব অল্প সনয়েই।রাজনীতিতে সবই সম্ভব! এবার আসা যাক, দলীয় প্রার্থীপদ ঘিরে বিজেপির এত ক্ষোভ বিক্ষোভ কিসের? কলকাতার হেস্টিংসে বিজেপির অফিসের সামনে হাজার হাজার কর্মী সমর্থকরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দলীয় প্রার্থীপদে মনোমত ব্যক্তিদের না পেয়ে।তৃণমূলের যেসব নেতা মন্ত্রীরা এসেছিলেন বিজেপির পক্ষে বিধানসভার টিকিট পাবেন বলে।তাঁরা টিকিট না পাওয়ায় কেউ কোটি টাকাতে বিজেপির টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে দাবি করছেন। আবার কেউ পুরাতন দলে যেকোনো শর্তে ফিরতে চাইছেন। বিজেপির রাজ্য অফিসে ( কলকাতায়) প্রার্থী হওয়ার আবেদনপত্র জমা নেওয়া সত্বেও কেন এই বিক্ষোভ প্রদর্শন? বিশেষ সুত্রে প্রকাশ, মন্ডল সভাপতি থেকে জেলা সভাপতি, বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল থেকে আসা হেভিওয়েট নেতাদের তালিকা দিল্লিতে পাঠানো হলেও, তা বাছাই করতে হিমসিম খেতে হয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কে।তাই মাস খানেক আগে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ( আইবি) র কাছে রিপোর্ট নাকি চেয়েছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। যেখানে দলীয়ভাবে এক একটি বিধানসভা আসনে ১০ থেকে ১৫ টি নাম পাঠানো হয়েছিল।সেখানে আইবি কে প্রতিটি কেন্দ্রে ২ টি জনপ্রিয় নাম চাওয়া হয়েছিল। হেভিওয়েট আসনগুলিতে ৩ টি নাম।প্রকাশ্যে অবশ্য আইবি এই ‘রিপোর্ট তলব’ কে স্বীকার করেনি।তবে এই রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত আইবির আধিকারিক নাম গোপন রাখার শর্তে জানিয়েছেন – ” আমরা সারাবছর রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা থেকে নির্বাচন পরিস্থিতি নিয়ে ধারাবাহিক রিপোর্ট পাঠিয়ে থাকি।এবার আমাদের বাংলার টিম কে আলাদাভাবে প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রের(২৯৪ টি) সমস্ত খুটিনাটি তথ্য সহ এলাকার জনপ্রিয় ২ থেকে ৩ জনের নাম চাওয়া হয়েছিল।আমাদের থানা ভিক্তিক নিজস্ব নেটওয়ার্ক ( ইনফরমার,ওয়াচার) এর পাশাপাশি বিভিন্ন অরাজনৈতিক নেতাদের সাথে কথা বলেছি।এমনকি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের মাধ্যমে আমরা বাংলার নির্বাচনী ভোটের উত্তাপ বুঝেছি “। এখান থেকেই বিজেপির অন্দরে উঠছে বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন। তাহলে কি রাজ্য বিজেপির বিভিন্ন লবি থেকে উঠে আসা নামগুলি বেশিরভাগই বাতিল হয়েছে ঘোষিত প্রার্থীপদ ঘোষণাতে।সেজন্যই কি প্রাক্তন পরিবহন মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর পাশাপাশি সর্বভারতীয় সহ সভাপতি মুকুল রায় কে বিধানসভার ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি চলেছে।যাতে দলীয় অন্তর্ঘাত না ঘটে? মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থীর সুপ্ত আশা দেওয়া হচ্ছে দিলীপ – মুকুলদের কে।যাতে কোন শিবির দলীয় অন্তর্ঘাতের সুযোগ না পায়। তবে যাইহোক প্রার্থীপদ ঘিরে তীব্র চাপানউতোর চলছে বিজেপির অন্দরে।ইতিমধ্যেই নিজেদের আদি বিজেপি দাবি করা এক সংগঠনের পক্ষ থেকে একশো আসনে প্রার্থীর মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে বাংলার বুকে।