শান্তিতে ভোট দেখল শাসনবাসী, বিরোধীদের অভিযোগ ভোট হয় নি

Spread the love

শান্তিতে ভোট দেখল শাসনবাসী, বিরোধীদের অভিযোগ ভোট হয় নি

রফিকুল হাসান, : ভোটের দিন যখন খুন জখমের রাজনীতি দেখল বাংলা সেসময় শান্তির ভোট দেখল শাসনবাসী। বিগত দিনে ভোটের দিন নানা হিংসা ও অশান্তির জন্য খবরের শিরোনামে থাকত শাসন এলাকা। সেখানে এদিন দু একটি বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া নির্বিঘ্নে ও শান্তিতে ভোট হল বারাসাত ২ ব্লক সহ গোটা শাসন এলাকায়। তবে বেলা গড়াতেই শাসন, দাদপুর, গোলাবাড়ি, আমিনপুর, ফলতি বেলিয়াঘাটা, খড়িবাড়ি, কামদুনি সহ বহু এলাকায় ভোট দিতে দেয় নি বিরোধী দলের লোকজনদের। বহু বুথে বিরোধীদলের এজেন্ট না থাকায় দুপুরের পর চলেছে শাসক দলের নেতৃত্বে দেদার ছাপ্পা। এমনটাই অভিযোগ ৩৮ নম্বর জেলা পরিষদের আইএসএফ প্রার্থী সেখ নাজিম উদ্দিনের। যদিও শাসন পঞ্চায়েত, ফলতি বোলিয়াঘাটা গ্রাম পঞ্চায়েত, কীর্তিপুর ১ গ্রাম পঞ্চায়েত ও দাদপুর পঞ্চায়েত এলাকায় শাসক দল গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে বহু আসনে ওয়াকাভার পেয়ে গিয়েছে। বিরোধী দলের পক্ষ থেকে নমিনেশন জমা দিতে বাধা পাওয়ায় শুধুমাত্র জেলা পরিষদের আসনে ভোট গ্রহন হয়েছে। বেশ কয়েকটি আসনে গ্রাম পঞ্চায়েত ও পঞ্চায়েত সমিতিতে ভোট হয়েছে। এদিকে কীর্তিপুর ২ গ্রাম পঞ্চায়েত ও রোহন্ডা চণ্ডীগড় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিরোধীদের নমিনেশন জমা দিতে পারায় মানুষজন নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পেরেছে। তবে মহিষগদি পশ্চিমাটি, পার খড়িবাড়ি, গলাসিয়া সহ বেশ কয়েকটি গ্রামে এজেন্ট বসা ও ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে আইএসএফ ও শাসকদলের মধ্যে সামান্য উত্তেজনা হয়। যদিও পরে পুলিশ ভোট কেন্দ্রে বাইরে জড়ো হওয়া বিভিন্ন দলের সমর্থকদের আঙুল উচিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন। এদিকে কামদুনির প্রাইমারি স্কুলের বুথে ভোটের লাইনে ভোটারদের কোল্ড ড্রিংকস দিয়ে প্রভাবিত করার অভিযোগ উঠেছে। পার্শ্ববর্তী পার খড়িবাড়ির বুথে ঘুগনি মুড়ি ও ঠান্ডা বরফ জল দেওয়ার অভিযোগ সামনে এসেছে।
এদিকে খড়িবাড়ির কৃষ্ণমাটি, বাদা, সানবেরিয়া, আন্দুলিয়া সন্ডালিয়া, দুগদিয়া, সোনাটিকারি, খামার নওবাদ, শাসন, বোয়ালঘাটা রামেশ্বরপুর, ফলতি, গোলাবাড়ি, দাদপুর এলাকা সহ বহু বুথে ছাপ্পা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন ৩৮ নম্বর জেলা পরিষদের আইএসএফ প্রার্থী সেখ নাজিম উদ্দিন। তিনি বলেন, বহু বুথে আমাদের এজেন্ট বসতে দেয় নি। শাসনে বিরোধীরা প্রতিরোধ গড়ে তুললে অশান্তি দেখা যেত। আসলে আমাদের কর্মী সমর্থকদের হুমকি ধমকি দিয়ে শাসন এলাকায় এক চেটিয়া ভোট করিয়েছে শাসকদল। খড়িবাড়িতে তৃণমূল নেতা ইসরায়েল এর নেতৃত্বে বাইক বাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়েছে। আমাদের দলের ছেলেদের ভয় দেখিয়ে কৃষ্ণমাটি সহ বহু বুথে অবাধ ছাপ্পা ভোট মেরেছে। খড়িবাড়ির কীর্তিপুর ১ অঞ্চল তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি দাপুটে তৃণমূল নেতা সেকেন্দার আলি তার বাহিনী নিয়ে কীর্তিপুর ২ অঞ্চলে গিয়ে দাপিয়ে বেড়িয়ে ভোট করিয়েছে। ছাপ্পা ভোট মেরেছে। একজন অঞ্চলের নেতা অন্য অঞ্চলে গিয়ে কি করে ভোট করায়? এগুলো নির্বাচন কমিশন দেখতে পায় না বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। কৃষ্ণমাটি, আন্দুলিয়া গ্রামের বুথে তৃনমূলের লোকজন কে কোন দলে ভোট দিচ্ছে তা দেখেছে। বয়স্কদের ও মহিলাদের ভোট তৃনমূলের কর্মীরা দিয়ে নিয়েছেন বলে তাঁর অভিযোগ। সানবেড়িয়া গ্রামের লোকজন বাদাতে গিয়ে কি করে ছাপ্পা মারে, বলে তিনি ক্ষুব্ধ। এটা ভোটের নামে প্রহসন করিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনে এই নিয়ে অভিযোগ ও আন্দোলন চলবে বলে তিনি জানান।
যদিও বিরোধী প্রার্থীর এই অভিযোগকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছেন ৩৮ নম্বর জেলা পরিষদের তৃণমূল প্রার্থী একেএম ফারহাদ। তিনি বলেন, এই এলাকায় বিরোধীরা নেই। ভোটের দিন ফুটেজ খাওয়ার জন্য অনেকে এসে বড় বড় কথা বলছেন বলে আইএসএফ প্রার্থীকে কটাক্ষ করেন। তিনি আরো বলেন, মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এঁর উন্নয়ন দেখে শান্তিতে ভোট দিয়েছেন। তাই ফুটেজ খাওয়ার জন্য বিরোধীরা কে কি বললো সেটা বড় কথা নয়। দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও ফিরহাদ হাকিমদের উন্নয়নের বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ায় আমাদের কাজ। আর সেই উন্নয়ন দেখেই গোটা শাসনের মানুষজন নির্বিঘ্নে ও শান্তিতে ভোট দিয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
উল্লেখ্য, এদিন আন্দুলিয়া জালালীবাগ দরবার শরীফে একেএম ফারহাদের পিতা পীর একেএম হায়দার আলীর মাজার জিয়ারত করে দোয়া নিয়ে ভোটের কাজে বের হয় ফারহাদ। দোয়া করেন তাঁর বড় ভাই পীরজাদা মাসুম বাখতেয়ারি। পিতার মাজারে দোয়া চেয়ে এদিন স্বস্ত্রীক ভোট দিতে যান একেএম ফারহাদ। তারপর তার নির্বাচনী এলাকা কীর্তিপুর ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত, দাদপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিভিন্ন বুথে বুথে ভোট কেমন হচ্ছে তা ঘুরে ঘুরে দেখেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *