‘আশার আলো’-র অসহায় শিশুদের পাশে ‘জন গণ মন’
নীহারিকা মুখার্জ্জী, ডেবরা, (পশ্চিম মেদিনীপুর)
ওদের পরিচয় ওরা অনাথ ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। জীবনযুদ্ধে লড়াই করার সামর্থ্য ওদের নাই। সমাজে ওরা চূড়ান্ত অবহেলিত। মূলত পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা এলাকায় ওদের বাড়ি। ওদের কাছে আশার আলো জাগিয়ে আলোকবর্তিকা হয়ে এগিয়ে আসেন স্থানীয় যুবক অসিত পাল। পাশে পান বিলু পাত্র, অসীম খাড়া, দেবব্রত দত্ত সহ অন্যান্যদের। ডেবরা থানার মাড়তলায় গড়ে তোলেন 'আশার আলো' অনাথ আশ্রম। বর্তমানে সেখানে ৩৫ জন অনাথ ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু আছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই আবাসিক। কোনোরকমে পাঁচজন সহৃদয় ব্যক্তির সহযোগিতায় ওদের প্রতিপালন করা হয়।
এবার এই অসহায় শিশুদের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় পশ্চিম মেদিনীপুরের হলদিয়ার 'জন গণ মন' ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট। সংস্থার পক্ষ থেকে গত ১০ ই এপ্রিল একটি ছোট্ট সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে ওদের হাতে তুলে দেওয়া হয় নতুন বস্ত্র, পাঠ্য সামগ্রী ও দুটি হুইলচেয়ার। এমনকি ওদের জন্য মধ্যাহ্ন ভোজনের আয়োজন করা হয়।
এর আগে জাতীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা হয়। সেখানে মনের আনন্দে সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি পরিবেশন করে আশ্রমের কচিকাচারা। এদের সঙ্গে ট্রাস্টের সদস্যদের অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।
ট্রাস্টের পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন চিন্ময় দাস, গীতিকা দাস, তরুণ কুমার মাইতি, অর্পিতা বলিদা, পার্থপ্রতিম চ্যাটার্জী, অনুপ কুমার পাঁজা, সুকোমল প্রধান, লক্ষ্মী টুডু, শ্রাবন্তী গায়েন, মীনাক্ষী মাইতি, চিত্রা চ্যাটার্জি, সোমিতা রাউত, ইতিশা সরকার, শুভঙ্কর সরকার সহ ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা তথা সম্পাদক অরিন্দম দাস।
প্রসঙ্গত ১৯৯৫ সালে পাড়ার অলোক দে মালাকারকে দেখে বিচলিত হয়ে ওঠেন অসিত বাবু। তিনি লক্ষ্য করে দেখেন নিজে ১০০% বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হওয়া সত্ত্বেও অলোকবাবু গরীব ও অসহায় মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এই ঘটনা অসিতবাবুর মনে 'এসো কিছু করে দেখাই' ভাবনার সৃষ্টি করে। অনাথ ও বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুদের জন্য গড়ে ওঠে 'আশার আলো'। পাশে পেয়ে যায় সমমনস্ক বন্ধুদের এবং প্রয়াত পিতা দুর্গাপদ পালের প্রেরণা। পড়াশোনার পাশাপাশি শিশুদের 'স্পোকেন ইংলিশ' শেখানো হয়।
অসিত বাবু বললেন - সবার সহযোগিতায় আমরা এই সংস্থাটি চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের আশা আগামীদিনের আরও বহু সহৃদয় মানুষের সহযোগিতা আমরা পাব।
অন্যদিকে 'জন গণ মন' ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা তথা সম্পাদক অরিন্দম দাস বললেন - একটা মহতী লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমি এই ট্রাস্ট গড়ে তুলি। পাশে পেয়ে যাই একগুচ্ছ সহৃদয় ব্যক্তিকে। তারপর বিভিন্ন সময়ে প্রত্যন্ত গ্রামের অসহায় শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছি। আগামী দিনেও আমাদের এই প্রচেষ্টা বজায় থাকবে।