সংস্কার করেন বিদায়ী জেলাশাসক মৌমিতা
নিরাময় যক্ষ্মা হাসপাতালকে আয়ূষ হাসপাতাল করার ভাবনা
খায়রুল আনাম
একদা বীরভূমের দুবরাজপুরের বিধায়ক তথা রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী ভক্তিভূষণ মণ্ডলের পরিকল্পনা-ভাবনাকে সার্থক রূপ দিয়ে বীরভূমের হেতমপুর এলাকায় গড়ে ওঠে নিরাময় যক্ষ্মা হাসপাতাল। যা সাধারণভাবে মানুষের কাছে টিবি হাসপাতাল নামেই পরিচিত। লোকালয় থেকে দূরে এই যক্ষ্মা হাসপাতালে সেই সময় পার্শ্ববর্তী অবিভক্ত বিহার রাজ্য থেকে বহু সংখ্যক যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগী এখানে এসে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা পরিষেবা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতেন। রোগীদের পথ্যের জন্য এখানে হাসপাতালের নিজস্ব উদ্যান, গো-শালারও ব্যবস্থা ছিলো। চিকিৎসক, নার্স থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থাও। কিন্তু পরবর্তীতে পরিচালনগত অব্যবস্থার কারণে এই যক্ষ্মা হাসপাতালটি বন্ধ হয়ে যায়। লুঠ হয়ে যায় যক্ষ্মা হাসপাতাল-সহ আবাসনের দরজা, জানালা থেকে অন্যান্য মূল্যবান সামগ্রী। কিন্তু করোনাকালে যখন সরকারি, বেসরকারি সমস্ত হাসপাতালে করোনা আক্রান্ত রোগীদের ঠাঁই হচ্ছে না তখন দৈনিক স্টেটসম্যান পত্রিকায় পরিত্যক্ত নিরাময় যক্ষ্মা হাসপাতালটি সংস্কার করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের সেখানে রেখে চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার বিষয়ে আলোকপাত করা হলে, তৎকালীন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু পরিত্যক্ত নিরাময় যক্ষ্মা হাসপাতালটি সংস্কার করে সেখানে করোনা আক্রান্ত রোগীদের রেখে চিকিৎসা করার বিষয়ে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে আবেদন জানালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দ্রুততার সাথে তাতে সম্মতি দিয়ে অর্থও বরাদ্দ করে দেন। তারপরই তৎকালীন জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু দ্রুততার সাথে সে কাজ সম্পন্ন করে এখানে একশো শয্যার কোয়ারেন্টাইন সেন্টার চালু করে দেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর থেকেই আমূল সংস্কার করা নিরাময় যক্ষ্মা হাসপাতালটি আবার পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে। জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসু এটিকে স্বাস্থ্য বিষয়ক কাজে ব্যবহার করার পরিকল্পনাও নেন। কিন্ত তিনিও উত্তরবঙ্গে বদলি হয়ে যাওয়ার পরে সংস্কার হয়েও পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়া নিরাময় যক্ষ্মা হাসপাতাল এবং আবাসনগুলি পুনরায় সমাজবিরোধীদের দখলে চলে যায় এবং এটিই বর্তমানে এই অঞ্চলের নেশাখোর, সমাজবিরোধী আর দেহ পসারিণীদের সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।
এই পরিস্থিতিতে আবারও নিরাময় যক্ষ্মা হাসপাতালকে সংস্কার করে এটিকে পঞ্চাশ শয্যার ইন্টিগ্রেটেড আয়ূষ হাসপাতাল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখান থেকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে রাজ্যের আয়ূষ দফতরের অধীনে হোমিওপ্যাথি ও আয়ূর্বেদিক চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই দুই বিভাগেই অস্ত্রোপচার করার ব্যবস্থাও থাকবে। এখানে ওপিডি সেন্টারও খোলা হবে। হাসপাতাল ছাড়াও সমস্ত আবাসনগুলিও আমূল সংস্কার করা হবে। এবং এটিই হবে রাজ্যের প্রথম আয়ূষ হাসপাতাল। এজন্য প্রয়োজনীয় অর্থ এখনও বরাদ্দ না হলেও, রাজ্যের প্রথম এই আয়ূষ হাসপাতালের জন্য রাজ্য সরকার কয়েক কোটি টাকা খরচ করতে চলেছে বলে জানা যাচ্ছে।।
।