মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু)
একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতা দখলে যেমন মরিয়া কেন্দ্রের শাসক দল বিজেপি। ঠিক তেমনি এই রাজ্যের ক্ষমতা পুনরুদ্ধারে তৎপর তৃনমুল কংগ্রেস। সম্প্রতি কেন্দ্রের তরফে সিবিআই – ইডির তৎপরতা ক্রমশ বেড়েছে।ভোটকুশলিদের মতে, এটি বাংলার শাসক দল তৃনমূল কে চাপে রাখার কৌশল। যাতে অভিযুক্ত নেতাদের একাংশ কে চমকিয়ে দলবদল খেলায় সামিল করা যায়। তর্ক বিতর্ক এর মধ্যেই মাসখানেক ধরে জনপ্রিয় তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী কে নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজা । রাজনৈতিক মহলের অভিমত – তৃনমূলের সেকেন্ড ম্যান হিসাবে পরিচিত নন্দীগ্রামের বাম অবসানের নায়ক শুভেন্দু অধিকারী কে নিয়ে গুজব ছড়িয়ে তৃনমূলের একে অপরের প্রতি অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরিতে সক্রিয় গেরুয়া শিবির। যাতে ঘোলাজলে মাছ ধরা যায়! এই বিতর্ক আবার বেড়েছে শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামীদের একাংশের প্রকাশ্য অবস্থান নিয়ে। কখনো দাদার ( শুভেন্দু অধিকারী) ছবি হাতে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক কৃতিদের উপহার তুলে দেওয়া। আবার কখনোবা ‘সমাজসেবী’, ‘মুক্তির সূর্য’ উপাধিতে শুভেন্দু অধিকারীর ছবি ফ্লেক্সে রাখা। দলের সাথে দুরত্ব বেড়েছে তাই বলে বিজেপিতে যোগদান? বেশ কিছু মিডিয়া তো ‘দিল্লীতে বিজেপির কেন্দ্রীয় সভাপতি নাড্ডা এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সাথে গোপন বৈঠকে শুভেন্দু’ শিরোনামে সংবাদ পরিবেশন করলো। তবে এইসব প্রকাশিত খবরের সততা জানতে ইতিমধ্যেই শুভেন্দু বাবু লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন বলে প্রকাশ। এবার একটু পেছন ফেরা যাক, তৃণমূলের একদা সেকেন্ড ম্যান মুকুল রায়ের ২০১৭ সালের দলবদলের পর রাজ্যব্যাপী পরিধি বাড়ে তৃনমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর। তিনি একাধারে রাজ্যসরকারের তিনটি গুরত্বপূর্ণ দপ্তরের পূর্ণমন্ত্রী। আবার দক্ষিণবঙ্গের পাশাপাশি উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার দলীয় পর্যবেক্ষক ছিলেন। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি লোকসভার আসন বাড়িয়ে নিলেও ওইসব এলাকায় শুভেন্দু অধিকারীর নিয়মিত জনসংযোগ এবং পরোপকারী ভুমিকায় তৃনমূল সাংগঠনিক শক্তি পুনরুদ্ধার করে ফেলে। বিশেষত জঙ্গলমহলের বাঁকুড়া – পুরুলিয়া – পশ্চিম মেদনিপুরে একসময় বিজেপির ভয়ে তৃণমূলিরা সিঁটিয়ে গিয়েছিল। যখন রাজ্যের শাসকদল শুভেন্দু অধিকারীর দৌলতে শক্তিবৃদ্ধিতে পৌছালো। আর তখনি ঘটলো ছন্দপতন। একুশে জুলাই পরবর্তী রাজ্য কমিটি গড়াতে দলীয় পর্যবেক্ষক পদটি তুলে দেন দলীয় নেত্রী। আর এতেই ক্ষুব্ধ হয় শুভেন্দু অধিকারীর অনুগামী মহল। সোশাল মিডিয়ায় কখনো বিরোধী দলের নেতার জন্মদিনে শুভেচ্ছা জনানো। আবার কখনোবা নন্দীগ্রাম – জঙ্গলমহলের ইতিহাস তুলে ধরা। রাস্তায় দাদার পোস্টার বুকে নিয়ে জনসংযোগে শুভেন্দু অনুগামীরা। সমাজসেবী – মুক্তির সূর্য তকমায় ভরে গেল পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন সড়কপথ। আর এই মনোমালিন্য পরিস্থিতিতে কাজে লাগাতে কখনো মুকুল রায় আবার কখনোবা দিলীপ ঘোষদের মত বিজেপির হেভিওয়েট নেতারা শুভেন্দু বাবুর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তৃনমূলের অন্দরে চাপানউতোর বাড়িয়ে দিলেন। বেশকিছু মিডিয়ায় প্রচার হলো – ৪০ জন বিধায়ক নিয়ে যোগ দিচ্ছেন শুভেন্দু। আবার কখনো বা ৫০ জন অনুগামীর আগামী বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট সহ গুরত্বপূর্ণ মন্ত্রী পদ চায় শিরোনামে খবরও প্রকাশিত হলো। সর্বশেষ এমন গুজব উঠলো। যখন করোনা আক্রান্ত কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। অন্যদিকে আবার স্বয়ং শুভেন্দু অধিকারীর মা গায়ত্রী দেবী অত্যাধিক ঠান্ডাজনিত কারণে হাসপাতালে ভর্তি। মাঝখানে আবার রাজ্যে কড়া লকডাউন অর্থাৎ বিমানও বন্ধ! । রটিয়ে দেওয়া হলো – গোপন বৈঠকে দিল্লীর কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতাদের দরবারে দরকষাকষিতে শুভেন্দু অধিকারী? এহেন পরিস্থিতিতে গর্জে উঠলেন শুভেন্দু বাবুর অনুগামীরা। লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হলো ফেক নিউজ করা মিডিয়া হাউস গুলিতে, এইরূপ দাবি শুভেন্দু অধিকারীর ঘনিষ্ঠ মহলে। রাজনৈতিক ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – সদ্য তৃনমূলের রাজ্য কমিটি গঠন সহ বেশ কয়েকজায়গায় গুরত্বহীন করা হয়েছে শুভেন্দু অধিকারী মহাশয় কে। এই ক্ষোভ কে কাজে লাগিয়ে বিজেপি ক্রমশ গুজব ছড়ানোতে তৎপর হচ্ছে। পূর্ব মেদিনীপুরের এক স্থানীয় মন্দিরে রামনবমীর দিনে শুভেন্দু বাবুর কীর্তনে অংশগ্রহণ করা পুরাতন ছবি কে রাম মন্দির সূচনার দিনে শুভেন্দু বাবু বলে যেমন সুকৌশলে সোশাল মিডিয়ায় বিজেপি ছেড়ে ছিল বলে দাবি। আবার লকডাউনে অসুস্থ মা কে নিয়ে যখন চিন্তায় শুভেন্দু অধিকারী। তখন দিল্লীতে বিজেপির সাথে গোপন বৈঠকে অংশগ্রহণ করার নিউজ প্রকাশিত করা হয়। মূল উদ্দেশ্য তৃনমূলের অন্দরে শুভেন্দু অধিকারী কে নিয়ে যেন অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি করা যায়। তাতে আখেরে লাভ বঙ্গ বিজেপির। কেননা তৃণমূলে মুকুল রায় পরবর্তী শুভেন্দু অধিকারী এমন একজন ব্যক্তিত্ব। যিনি দক্ষিণবঙ্গ থেকে উত্তরবঙ্গের দলীয় নেতা কর্মীদের সাথে সুখেদুঃখে বারোমাস থাকেন। তাই এহেন হেভিওয়েট নেতা কে নিয়ে গুজব তৈরি করলে তৃনমূলের অন্দরে বইতে পারে চোরাস্রোত। যদিও বিজেপির তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। পাশাপাশি শুভেন্দু বাবুও উদ্দেশ্য প্রণোদিত মিথ্যা খবরের সততা জানতে ইতিমধ্যেই লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মিডিয়ায়।