কবিপ্রণামে জোড়াসাঁকো রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি

Spread the love

কবিপ্রণামে জোড়াসাঁকো রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি

পারিজাত মোল্লা,

শতাব্দীপ্রাচীন হতে চলা কলকাতা জোড়াসাঁকো রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি তাদের রথীন্দ্রমঞ্চ প্রেক্ষাগৃহে মহাসমারোহে এবং যথাযথ মর্যাদা সহকারে পালন করল এবারের বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২ তম জন্মজয়ন্তী উৎসব। গত ২০/০৫ থেকে ২৪/০৫ – এই পাঁচদিন ধরে প্রতি সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় রবীন্দ্রজন্মজয়ন্তী পালন। প্রতি সন্ধ্যায় বিদগ্ধ, জ্ঞানীগুণী বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ববর্গের উজ্জ্বল উপস্থিতি, জ্ঞানসমৃদ্ধ বক্তৃতা, রবীন্দ্রনৃত্য, রবীন্দ্রগান, রবীন্দ্রকবিতা ইত্যাদি পরিবেশনা সহকারে প্রতিদিনই হয়ে ওঠে উৎসবমুখর আয়োজন। আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অতিথিবর্গের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডঃ নির্মাল্য নারায়ণ চক্রবর্ত্তী, (উপাচার্য্য রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়), বিধায়ক দেবাশীষ কুমার, স্থানীয় পৌরপিতা রাজেশ সিনহা, রবীন্দ্র কুমার পাল(অধিকর্তা, হিন্দুস্থান সুইটস), কিরণ লামা (সম্পাদক দাইজোকা বুদ্ধমন্দির -বুদ্ধগয়া), বিচারপতি অপূর্ব সিনহা রায়( কলিকাতা হাইকোর্ট), জনাব আন্দালিব ইলিয়াস( কলকাতায় নিযুক্ত উপ-হাইকমিশনার বাংলাদেশ সরকার) বিশিষ্ট সাহিত্যিক শ্রী প্রচেত গুপ্ত প্রমুখ। রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির কর্মপরিচালন সমিতির সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, ডঃ সুজিত কুমার বসু, ডাঃ কুনাল সরকার, ডাঃ অভিজিত ঘোষ, কোষাধ্যক্ষ গৌরাঙ্গ মিত্র, সৌমিত্র বন্দ্যোপাধ্যায়, ধীমান দাশ ও আরও অনেকে। প্রতি সন্ধ্যায় অনুষ্ঠান শুরুর আগে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ববর্গ মঞ্চে স্থাপিত কবিগুরুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর প্রারম্ভিক ভাষণ দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। তারপর শুরু হয় বক্তৃতামালা, রবীন্দ্রসঙ্গীত, রবীন্দ্রকবিতা আবৃত্তি, রবীন্দ্রনৃত্য ইত্যাদি অন্যান্য পরিবেশনা। সোসাইটির শিল্পীসদস্যবৃন্দের পরিবেশনায় ছিল সমবেত সঙ্গীত, সমবেত আবৃত্তি এবং কবিগুরু রচিত ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত একটি শ্রুতিনাটক “দেনা পাওনা”। এ বছরের রবীন্দ্রসঙ্গীত ও রবীন্দ্রকবিতা আবৃত্তির অডিশন থেকে ঊত্তীর্ণ হওয়া বেশ কিছু নবীন শিল্পীকে পরিবেশনার সুযোগ করে দেওয়া হয় রথীন্দ্রমঞ্চে। বিশিষ্ট রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী ও বাচিকশিল্পীদের পরিবেশনায় প্রতি সন্ধ্যার অনুষ্ঠান হয়ে ওঠে শ্রুতিমধুর, আনন্দদায়ক ও মনোজ্ঞ। বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন শ্রীকুমার চ্যাটার্জী,গৌতম মিত্র, অলোক রায়চৌধুরী, রাজশ্রী ভট্টাচার্য ,শিঞ্জিনী আচার্য্য মজুমদার, শিরীন সুরাইয়া, পূবালী দেবনাথ, চন্দ্রাবলী রুদ্র দত্ত, রীনাদোলন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুস্মিতা গোস্বামী, অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রবুদ্ধ রাহা, অ্যারিনা মুখার্জী, রিমি পাল, দেবলীনা দাস,শ্রেয়া ঘোষ, সৌমী বসু, ঈশিতা বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রীতম চক্রবর্ত্তী এবং আরও শিল্পী। কবিতা আবৃত্তিতে ছিলেন দেবাশীষ বসু, স্বপ্না দে, মুরারি মুখোপাধ্যায়, মেধা বন্দ্যোপাধ্যায়, সুমন্ত্র সেনগুপ্ত ,শোভনসুন্দর বসু, জগন্নাথ বসু, ঊর্মিমালা বসু, প্রণতি ঠাকুর, ঊর্মিলা সেন, সুস্মিতা সরকার,প্রণমি ব্যানার্জী, সাবিনা ইয়াসমিন, অস্মিতা দত্ত,প্রিয়াঙ্কা ভট্টাচার্য্য সহ আরও বাচিকশিল্পী।বিভিন্ন দিনে মঞ্চে সমবেত নৃত্য, নৃত্যগীতি-আলেখ্য পরিবেশন করেন – “প্রাণ ভরিয়ে”, “সৃজনী কলাকেন্দ্র (কাঁকুড়গাছি)”, “জাহ্নবী (পূর্বসিঁথি)”, “নৃত্যমন্দির” ইত্যাদি সাংস্কৃতিক সংস্থার শিল্পীবৃন্দ। অনুষ্ঠানের প্রথম দিন রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির সাহিত্য পত্রিকা “কড়ি ও কোমল” সংখ্যাটির মোড়ক উন্মোচিত হয় ।পত্রিকাটির সম্পাদনায় রঞ্জিত কুমার নায়ক( সোসাইটির সহ-সম্পাদক)। অনুষ্ঠানের শেষদিন, শেষপর্বে ছিল একটি উচ্চমানের উপস্থাপনা – “ওঁ তৎ সৎ” – পরিবেশনায় নৃত্যবিলাস সুচন্দ্রা ব্যানার্জী। গীতার বিভিন্ন অধ্যায় থেকে বিভিন্ন শ্লোক চয়ন করে ওঁ, তৎ এবং সৎ এই তিনটি শব্দের জ্ঞানগর্ভ ব্যাখ্যা অসামান্য ভাষ্যযোগে, সুপ্রযুক্ত রবীন্দ্রসঙ্গীত সহযোগে এবং অনুপম নৃত্যশৈলী সমন্বয়ে এই অনিন্দ্যসুন্দর পরিবেশনা সকলের মন হৃদয়কে ছুঁয়ে যায়, বিহ্বলাবিষ্ট করে রাখে। পাঁচদিন ধরে চলা এই উৎসব অনুষ্ঠানের পরিসমাপ্তি হয় সমবেত কণ্ঠে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *