গাজিয়াবাদ থেকে উদ্ধারকৃত হার্ড ডিস্ক সহ অন্যান্য নথি ৫ দিনের মধ্যে পেশ করার নির্দেশ বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চের
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চে প্রতিদিনই চলছে এসএসসি সংক্রান্ত মামলার শুনানি। ইতিপূর্বে বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকদের একাংশের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সিবিআইয়ের গাজিয়াবাদে উদ্ধার হওয়া হার্ড ডিস্ক সহ অন্যান্য তথ্য প্রমাণ নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন তুলেছিলেন।এবার সেই প্রশ্নের উত্তর চাইলো কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চও। শুক্রবার এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত মামলায় গাজিয়াবাদে থেকে উদ্ধার হওয়া ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, হার্ড ডিস্ক এবং তার মধ্যে থাকা উত্তরপত্র -সহ সমস্ত নথি আদালতে পেশ করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট। এদিন বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছেন, -‘আগামী ২৪ শে জানুয়ারি সমস্ত নথি পেশ করতে হবে।যদি পরবর্তী শুনানির দিন কোনও কারণে ইলেকট্রনিক ডিভাইস পেশ করা সম্ভব না হয়, তাহলে মামলা চলাকালীন তা পেশ করতে হবে’।এদিনের শুনানিতে বিচারপতি এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন, -‘ ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস পেশ করা সম্ভব না হলেও তার মধ্যে থাকা নথির কপি পেশ করতে হবে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-কে’। এদিন সিবিআই-এর পাশাপাশি এসএসসি-র কাছে থাকা এই সংক্রান্ত সমস্ত নথিও পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ । এই সংক্রান্ত তথ্য স্কুল সার্ভিস কমিশনের সার্ভারে রয়েছে। বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ এদিন এটাও স্পষ্ট করে দিয়েছে, -‘ মামলায় যুক্ত কোনও বিতর্কিত চাকরিপ্রাপক তাঁর নিজের উত্তরপত্র দেখতে চাইলে, তিনি আদালতের নজরদারিতে দেখতে পারেন’। আদালতের সামনে উত্তরপত্র পেশ নিয়ে মতের অমিল রয়েছে বিতর্কিত চাকরি প্রাপকের আইনজীবীদের মধ্যে ।একাদশ – দ্বাদশের বিতর্কিত চাকরি প্রাপকের দু’জন চান, তাদের উত্তরপত্র আদালতের সামনে পেশ করা হোক। সেখানেই তাঁরা একবার তাঁর নিজেদের উত্তরপত্র পরীক্ষা করে দেখতে চান।কিন্তু বাকি সমস্ত বিভাগের বিতর্কিত চাকরি প্রাপকরা চান না উত্তরপত্র আদালতের সামনে পেশ করা হোক। তাঁরা এই ডিজিটাল নথির সত্যতা নিয়েই সংশয় প্রকাশ করছেন। তাঁদের আইনজীবীদের আবেদন , -‘যদি কোনও একজন নির্দিষ্ট মামলাকারী তাঁর উত্তরপত্র দেখতে চান তাহলে আলাদা বিষয়, কিন্তু এটা যেন সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না হয়’। এদিন এই মামলার শুনানি পর্বে বিতর্কিত চাকরিপ্রাপকদের একাংশের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় সওয়াল করে জানান, “ নাইসা অধিকর্তা এবং প্রাক্তন আধিকারিক পঙ্কজ বনশলকে আমরা জেরা করতে চাই।আদালতের নির্দেশে কারা প্যানেলের মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে চাকরি পেয়েছেন সেই তালিকা স্কুল সার্ভিস কমিশন আদালতে পেশ করুক। প্যানেল মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে কেউ চাকরি পেতে পারেন না।” কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই-এর আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য সওয়াল করে বলেন, “এই মামলার তদন্তে আমরা যে যে নথি এবং তথ্য উদ্ধার করেছি তার সবগুলিই স্কুল সার্ভিস কমিশনকে দিয়েছি। তারা সেগুলি খতিয়ে দেখে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।” কলকাতা হাইকোর্টের বিশেষ ডিভিশন বেঞ্চ এর বিচারপতি দেবাংশু বসাক জানান, “এসএসসি র ওপর আমরা কীভাবে বিশ্বাস করব? এসএসসি বারবার তার অবস্থান বদল করেছে। কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে তারা ভিন্ন অবস্থান নিয়েছেন এই এজলাসেও এসএসসি সর্বশেষ যে হলফনামা দাখিল করেছে সেখানেও তারা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেনি।” এরপর বিচারপতি সিবিআই-কে প্রশ্ন করেন, “পঙ্কজ বনশল কি হেফাজতে রয়েছে?” সিবিআই-এর আইনজীবী জানান, ” না, তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। কিন্তু তাঁর নাম চার্জশিটে রয়েছে।” চার্জশিটে নাম থাকা সত্বেও কেন গ্রেপ্তার হননি পঙ্কজ বনশল তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন বিতর্কিত চাকরি প্রাপকদের একাংশ আইনজীবীরা।