সাপ উদ্ধার করল ‘প্রকৃতিকন্যা’ অদিতি

Spread the love

সাপ উদ্ধার করল ‘! প্রকৃতিকন্যা’ অদিতি

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

বিষধর বা নির্বিষ - যাইহোক না কেন সাপ দেখলেই আমরা তাকে মেরে ফেলতে উদ্যত হই। এতে যে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে সেটা আমরা তখন মাথায় রাখিনা। একটাই নীতি - শত্রুর শেষ রাখতে নাই। কিন্তু উত্তর চব্বিশ পরগণার দত্তপুকুরের 'প্রকৃতিকন্যা', এলাকার মানুষের কাছে এই নামেই পরিচিত, অদিতি গাইনের ভাবনা অন্যরকম। তার লক্ষ্য 'লিভ এণ্ড লেট লিভ' নীতির যথাযথ অনুসরণ করা। যার আবার নিদর্শন পাওয়া গ্যালো গত ২২ শে এপ্রিল।

সন্ধ্যের সময় অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসে অদিতির কাছে। চমকে ওঠে সে। ফোনটা রিসিভ করে জানতে পারে  দত্তপুকুরের জয়পুল থেকে কোনো এক সুমন হাজরা তাকে ফোন করেছে। কারণ   তার বাড়ির উঠানে নাকি একটা চন্দ্রবোড়া সাপ দেখতে পাওয়া গ্যাছে। যদিও সেই মুহূর্তে সেটি আর দ্যাখা যাচ্ছেনা। পরে উঠানের এক কোণে আবার সাপটিকে দেখতে পাওয়া গেলে মাঝরাতে অদিতির কাছে সেই নাম্বার থেকে ফোন আসে। সাত কিলোমিটারের বেশি দূরে জায়গাটা অবস্থিত হওয়ার জন্য সেই মুহূর্তে সেখানে যাওয়াটা সম্ভব ছিলনা। সাপটাকে অযথা না খুঁচিয়ে বা বিরক্ত না করার পরামর্শ দিয়ে তাদের সাপটির দিকে নজর রাখার পরামর্শ দেয় সে।

সাত সকালেই সাপ ধরার 'হুক' নিয়ে সুমন বাবুর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করে অদিতি। গিয়ে দেখতে পায় একটা বিশাল আকৃতির চন্দ্রবোড়া সাপ উঠানের এক কোণে রয়েছে। ইতিমধ্যে তার আসার খবর পেয়ে সেখানে ভিড় জমে যায়। প্রত্যেককে সে অযথা আতঙ্কিত হতে নিষেধ করে। তারপর ধীরে ধীরে সে হুকের সাহায্যে সাপটাকে উদ্ধার করে। খবর পেয়ে স্থানীয় বনদপ্তরের দু'জন কর্মী সেখানে উপস্থিত হয়। তাদের হাতেই অদিতি সাপটি তুলে দেয়। অবাক বিষ্ময়ে মানুষ তার সাপ উদ্ধারের দৃশ্য দেখতে থাকে। মাতৃস্থানীয়া মহিলারা দু'হাত তুলে অদিতিকে আশীর্বাদ করে।

  সুমন বাবু বললেন - আমাদের এখানে এর আগে সাপ দেখতে পেলেই মেরে ফেলতাম। কিন্তু এলাকার মেয়ে অদিতি সাপ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী না মেরের ফেলার জন্য  বারবার আমাদের সচেতন করে। এমনকি গতবছর পুজোর সময় সে রীতিমত প্রজেক্টরের সাহায্যে বিষয়টি বুঝিয়ে বলে। তাই সাপটাকে না মেরে ফেলে ওকে খবর দিই। বাচ্চা মেয়েটা যখন সাপটা উদ্ধার করছিল তখন খুব ভয়ও লাগছিল। তবে একটা অবলা প্রাণীকে মেরে না ফেলে সে যেভাবে উদ্ধার করল তাতে আমরা বিষ্মিত হয়ে পড়ি। 

  কলেজ ছাত্রী অদিতির বক্তব্য - এর আগেও আমি একাধিকবার সাপ উদ্ধার করেছি। আমি বারবার মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করি যে সাপের কোনো ক্ষতি না করলে সাপও আমাদের কোনো ক্ষতি করবেনা। দয়া করে ওদের না মেরে বনদপ্তরকে খবর দিন। ওরা এসে সাপ উদ্ধার করে নিয়ে যাবে। তাছাড়া মাথায় রাখতে হবে সব সাপ বিষধর নয়।  সাপ মেরে ফেললে কিছু জীবনদায়ী ওষুধ কিন্তু তৈরি হবেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *